উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় এই অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
একই দিন সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি। এর আগে ৩ জানুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে, যা গত দুই দিন ধরে পঞ্চগড় জেলায় বিরাজ করছে।
বরফের মতো ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য খড়কুটো জ্বালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর থেকেই তীব্র ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
এদিকে, শীতের তীব্রতার কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শীতজনিত রোগ বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
তবে ভোরের কুয়াশা কেটে গেলে ঝলমলে রোদ উঠার ফলে জনজীবনে সাময়িক স্বস্তি ফিরেছে। কর্মজীবী মানুষরা শীতের পোশাক গায়ে দিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। কেউ নদীতে পাথর তুলছেন, কেউ সবজি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত, আবার কেউ কাজ করছেন চা বাগানে।
তেঁতুলিয়ার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হিমালয় পর্বতের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ার কারণে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আজ সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা পরিমাণ ছিল ৯৯ শতাংশ।’
পঞ্চগড়ের হতদরিদ্র মানুষের শীতকাল কাটছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাপমাত্রা কম থাকায় সন্ধ্যার পর হাটবাজারগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। ছিন্নমূল মানুষেরা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।
উত্তরের এ প্রান্তিক জেলায় শীতের এমন বৈরিতা প্রতিবছরই আসে, তবে এবার তীব্রতা বেশি। সরকারি উদ্যোগে দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণ এবং শীতজনিত রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।