চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস, পরিবারে শোকের মাতম
চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস, পরিবারে শোকের মাতম। ছবি: সংগৃহীত
প্রশাসনের প্রাণ কেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাক চাপায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী মো. সোহানুর জামান নয়নের গ্রামের বাড়ি রংপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার ছড়ান আটপুনিয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
আক্তারুজ্জামান ও নার্গিস দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। কৃষক বাবার সব ভরসা ছিল তাকে ঘিরেই। অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলের চাকরি দিয়ে অনাগত দিনগুলো সুখে শান্তিতে কাটাবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিলো সব।
সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তার মা নার্গিস বেগম। একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে শোকের মাতম বইছে পরিবারে।
ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন ছিলেন একজন দক্ষ কর্মী। দক্ষ কর্মীর সুবাদে তাকে সম্প্রতি সিলেট থেকে নিয়ে এসে রাজধানীর তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়। কর্ম দক্ষতার কারণে দুই বছরে স্থান করে নিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস স্পেশাল টিমে।
সর্বশেষ বুধবার দিবাগত রাতে দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে গিয়ে ট্রাকের চাপায় নিহত হন নয়ন। নয়নের এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার থেকে শুরু করে সহকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ৫ মিনিটের দিকে ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তর প্রাঙ্গণে।
এসময় পুরো প্রাঙ্গণে ছিল শোকের ছায়া৷ দেশের পতাকায় মোড়ানো ফায়ার ফাইটার নয়নের মরদেহ যখন সেখানে রাখা হয় তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সবার চোখ তখন অশ্রুসিক্ত।
জানাজার আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ফায়ার সার্ভিসে সদর দপ্তরে উপস্থিত হয়ে ফায়ার ফাইটার নয়নকে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে জানাজায় অংশ নিতে আসা নয়নের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই এভাবে চলে গেল যে আর ফিরে আসবে না কখনো। তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আমার কিন্তু আর শেষ দেখা হলো না। তার এই অকাল মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। যুদ্ধ করতে গিয়েছিল কিন্তু যুদ্ধ শুরুর আগেই সে নির্মমভাবে দুর্ঘটনায় নিহত হলো। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন কাজ করছিল তখন যদি পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিত তাহলে আমার ভাইকে এভাবে আর মরতে হতো না। আমরা আশা করব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে, যাতে করে নয়নের মত আর কারো মৃত্যু না হয়।
জানাজা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গতকাল আমাদের ফায়ার ফাইটার নয়ন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। আমরা সবাই তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। নয়নের বয়স খুবই কম ছিল। সে মাত্র দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করছিল। কর্তব্যরত অবস্থায় সে মারা যায়, তার মা বাবার যে কী অবস্থা সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। সে তার বাবা-মার একমাত্র ছেলে। কিছুদিন আগে সিলেটে থেকে পোস্টিং হয়ে ঢাকায় এসেছে। সে খুবই দক্ষ ফায়ার ফাইটার ছিল তাই তাকে স্পেশাল টিমের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল।