আইসিসিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। লন্ডন-ভিত্তিক আইনি সংস্থা ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্স’ থেকে ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন এই মামলাটি দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগ এনেছেন, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী ব্যারিস্টার আশরাফুল আরেফিন জানান, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সারাহ ফোরে ও ব্যারিস্টার এমিল লিক্সান্দ্রু।
ব্যারিস্টার আরেফিন সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। এটি "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন" নামে পরিচিতি লাভ করে। আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পুনর্বহাল ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য ৫৬ শতাংশ পদ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামে। আন্দোলনটি মূলত কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে শুরু হলেও পুলিশের গুলিতে এক ছাত্রের মৃত্যুর পর দ্রুত একটি বৃহত্তর গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এর পর শিক্ষার্থীরা কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সরব হন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্রদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করতে সরকার পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে মোতায়েন করে। ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র-যেমন বার্ডশট প্লেট এবং তাজা গুলি-ব্যবহার করে তাদের দমন করা হয়। এই বর্বরতার ফলে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন, যাদের মধ্যে অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, এই সহিংস দমন এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সক্ষম কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ, বেশিরভাগ কর্মকর্তাই পূর্ববর্তী সরকার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং রাজনৈতিক স্বার্থ এই ধরনের তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
আইসিসিতে এই মামলা দায়েরের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদ এবং অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। মামলার অভিযোগে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, গোপন বন্দিশালায় নির্যাতন, চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা, এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদি এই মামলায় আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা যেতে পারে।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত জানানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।