৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ হাজার ৫৯৮ জন
৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ হাজার ৫৯৮ জন। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ
চলতি বছেরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৫৯৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ৯ হাজার ৬০১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের ৩৪.৩৬ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার।
রবিবার (২০ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৮৫টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৮ জন এবং আহত ৯ হাজার ৬০১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭৭ জন, শিশু ৭২৯ জন।
এর মধ্যে ২ হাজার ৪১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৯২৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭ দশমিক ২১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১২১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮৮ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
আরও বলা হয়, এই সময়ে ৮৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২৪ জন নিহত, ১২৫ জন আহত এবং ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৪৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২২৭ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯২৪ জন (৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ), বাস যাত্রী ২৯৩ জন (৫ দশমিক ২৩ শতাংশ), পণ্যবাহী যানবাহনের আরোহী (ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ইত্যাদি) ৪২০ জন (৭ দশমিক ৫০ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ আরোহী ২৯৫ জন (৫ দশমিক ২৬ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান ইত্যাদি) ১০৯৭ জন (১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহেন্দ্র-টমটম) ২৭৮ জন (৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১৭০ জন (৩ দশমিক ০৩ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৪৯টি (৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২১৩৪টি (৩৮ দশমিক ৯০ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৭১টি (১৪ দশমিক ৫ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৬৭০টি (১২ দশমিক ২১ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬১টি (১ দশমিক ১১ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার ১১ টি কারণ জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন:
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
২. বেপরোয়া গতি;
৩. চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
৪. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
৬. তরুণ-যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
৮. সড়ক এবং সড়ক পরিবহন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়া;
৯. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
১০. বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি;
১১. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে সংস্থাটির ১২ টি সুপারিশ:
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে;
২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
৩. বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে;
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
৭. সড়ক এবং সড়ক পরিবহন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব করা;
৮. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা;
৯. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো;
১০. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করা;
১১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা;
১২. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জীবনমুখি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো।