হারিয়ে যাওয়া ২০০ একর জমি বাংলাদেশকে ফেরত দিতে সম্মত ভারত
ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলকায় পদ্মা নদীর ভাঙনে ভারতের অভ্যন্তরে নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রায় ২০০ একর জমির জরিপে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। এতে করে বাংলাদেশি মালিকদের তাদের জমির মালিকানা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সৌজন্য বৈঠকে বিবাদমান জমি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে ওই জমি পুনরায় জরিপ করে জমির মালিকানা প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিয়মিত সৌজন্য বৈঠকে এই সিন্ধান্তের বিষয়টি আজ সোমবার দুপুরে নিশ্চিত করেন বিজিবির-৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (পিএসসি) মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান। বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিবাদমান জমি পুনরায় জরিপ করে প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে রোববার দুপুরে বিএসএফের আহ্বানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্ডির জামালপুর বিওপির সীমান্ত পিলার ১৫২ /৭-এস থেকে আনুমানিক ১৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিবাদমান জমি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া ভারতকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে ও মাদক পাচার রোধে গুরুত্বারোপ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিজিবির পক্ষে কুষ্টিয়ার বিজিবি-৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান (পিএসসি) এবং বিএসএফের পক্ষে রওশনবাগ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট বিক্রম দেব সিং নেতৃত্ব দেন।
বিবাদমান জমিগুলো ভারত সীমান্তে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীঘেঁষা চল্লিশ পাড়া এলাকায় অবস্থিত। স্থানীয়রা জানান, চল্লিশপাড়া বর্ডার আউট পোস্টের (বিওপি) পিলার ১৫৭ /এমপি থেকে ৮৫ / ১০-এস এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার পদ্মা নদীর ভাঙনে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সীমানা এলোমেলো হয়ে যায়।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি উভয় দেশের সার্ভেয়ার, বিজিবি ও বিএসএফ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের আনুমানিক ২০০ একর জমি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের আনুমানিক ৪০ একর জমির গরমিল পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, ‘রুটিন মোতাবেক নিয়মিত সৌজন্য সাক্ষাৎ গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সার্ভেয়ারে বাংলাদেশের পাওনা প্রায় ২০০ একর জমি ও ভারতের পাওনা প্রায় ৪০ একর জমির গরমিল পাওয়া গেছে। যা আগামী অক্টোবর মাসে সুবিধাজনক সময়ে উভয় দেশের সার্ভেয়ার, বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে পুনরায় জরিপ করে জমির প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে উভয় ব্যাটালিয়ন কমান্ডাররা একমত দিয়েছেন।’
মাহবুব মুর্শেদ আরও বলেন, ‘মূলত সীমান্তের বিবাদমান অংশটি নদী এলাকা হওয়ায় পদ্মার ভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুই দেশের সঠিক সীমানা নির্ধারণে জটিলতা ছিল। এটি একটি দীর্ঘদিনের চলমান প্রক্রিয়া ছিল। যেটি বিভিন্ন কারণে ডিলে হয়ে যাচ্ছিল। আমি তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করি এবং দুই দেশের প্রচেষ্টায় তা সমাধান সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দ্রুত সঠিক সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তবে জমি বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত কেউ তা ব্যবহার করতে পারবে না।’
সৌজন্য সাক্ষাতে সীমান্তে বিএসএফকে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ‘নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তে আটক না করা, ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও নিষিদ্ধ কোনো পণ্য যাতে বাংলাদেশে পাচার হতে না পারে এবং আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সীমান্তবর্তী জনসাধারণ যাতে অবৈধভাবে দুই দেশের সীমান্তের পূজামণ্ডপে যাওয়া-আসা করতে না পারে সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলেও জানান বিজিবি কর্মকর্তা মাহবুব মুর্শেদ।