সাংবাদিক পীর হাবিব আর নেই
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার পীর হাবিবুর রহমান আর নেই। আজ শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টা ৮ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান রেখে গেছেন।
পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে পীর হাবিব ছিলেন তৃতীয়। তার এক ছোটভাই পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য।
পীর হাবিবুর রহমান ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। গত বছর অক্টোবরে মুম্বাই জাসলুক হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে ক্যানসার মুক্ত হন। ২২ জানুয়ারি তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হন। বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহর পরামর্শে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনামুক্ত হওয়ার পর কিডনি জটিলতার কারণে তাকে ভর্তি হতে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় স্ট্রোক করলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
পীর হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯৬৩ সালের ১২ নভেম্বর সুনামগঞ্জ শহরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ১৯৮৪ সাল থেকে সাংবাদিকতায় তার হাতেখড়ি নেন। রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক বাংলাবাজার, যুগান্তর, মানবকণ্ঠ, আমাদের সময় পত্রিকায় কাজ করেছেন। রাজনৈতিক ও পার্লামেন্ট বিষয় রিপোর্টার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। কিছু দিন তিনি অনলাইন মাধ্যমে কাজ করেন। তিনি নিউজপোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের প্রতিষ্ঠাতা। সর্বশেষ বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
প্রকাশিত বই
সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে অনেকগুলো বই লিখেছেন পীর হাবিবুর রহমান। তার বইগুলো পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। উল্লেখযোগ বইয়ের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা : অজানা ইতিহাস’, দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ‘এক্সক্লুসিভ’, সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘খবরের বারান্দা’, ‘টক অফ দ্য প্রেস’, ‘অফ দ্য রেকর্ড’, রাজনৈতিক কলাম সংকলন ‘রাজনীতির শেষ পেরেক’, ‘ভিউজ আনকাট’, উপন্যাস ‘জেনারেলের কালো সুন্দরী’, ‘বুনোকে লেখা প্রেমপত্র’, ‘মন্দিরা’ প্রভৃতি।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যু দেশের গণমাধ্যম জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশে সাংবাদিকতার উন্নয়ন ও প্রসারে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন সংবাদকর্মীরা তা চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
এ ছাড়া, প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা শোক জানিয়েছেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক অতি. আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ, জালালাবাদ এসোসিয়েশন, সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি এক সময়ের তুখোড় রিপোর্টার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পীর হাবিবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।
সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির শোক
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি আজিজুল পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা মনি এক বিবৃতিতে বলেন, পীর হাবিবুর রহমান প্রখর রাজনীতিসচেতন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন মেধাবী সাংবাদিককে হারালো, সিলেট বিভাগ হারালো একজন কৃতিসন্তানকে।
সমাজের নানা অসঙ্গতি ও রাজনৈতিক বিষয়াবলী লিয়ে ক্ষুরধার লেখনীর জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আরও পড়ুন : সাংবাদিক পীর হাবিবের প্রতি শ্রদ্ধা : শহীদ মিনারে রবিবার, সুনামগঞ্জে সোমবার
এসএম/কেএফ/এপি/