বন্যাকবলিত দেশের ৪৩ উপজেলা, একজনের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল এবং বৃষ্টির প্রভাবে দেশের ছয়টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী টিম জেলায় জেলায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে এক তথ্য বিবরণীতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বন্যায় ছয়টি জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষ ক্ষত্রিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বলা হয়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গত ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখ থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য:
- বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ৬টি (কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার);
- ৪৩ উপজেলা বন্যা প্লাবিত;
- ৬ জেলায় মোট ১,৮৯,৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
- ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৭,৯৬,২৪৮ জন।
- বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় ১ (এক) জনের মৃত্যু হয়েছে।
- পানিবন্দি/ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের মোট ১,৩৫৯ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ১৭,৮৮২ জন লোক এবং ৩,৪৮৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
- জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৩০৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রীর বিবরণ:
বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নাম্বারটি চালু রয়েছে।
ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এছাড়া বিজিবিসহ আরও নৌযান আনানো হচ্ছে।
বন্যা সম্পর্কিত জেলাভিত্তিক তথ্য:
ফেনী
বন্যায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ;
- বন্যার পানিতে ডুবে ১(এক) জনের মৃত্যু;
- আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৭৮টি;
- আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ২০,০০০ জন;
- মেডিকেল টিম চালু ৭৬ টি;
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ৪২,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৪০০ মেঃটন ও শুকনা খাবার ৩,০০০ প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা
বন্যায় কুমিল্লা জেলার ১১টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- দুর্যোগ কবলিত জনসংখ্যা ৪৭,৭৭০ জন;
- আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮৭টি;
- আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৯২ জন;
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ২৫,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৬০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী
বন্যায় নোয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১,২১,২০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১২,০২,০০০ জন;
- আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৩৪৫টি;
- আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৭,৭৫৩ জন ও আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১৭৯৫টি;
- মেডিকেল টিম চালু ৮৮টি;
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ২৫,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৬০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে
চট্টগ্রাম
বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
- পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ২০,১৭৫ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৯৫,৯০০ জন;
- আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ২৩২টি;
- আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি;
- মেডিকেল টিম চালু ১২৭ টি;
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ১৫,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৬০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজার
বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১২,৯৬৬ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৬১,৬৬০ জন;
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ টাকা ১০,০০,০০০/-, ত্রাণ কার্য (চাল) ১,৮৫০ মেঃটন ও শুকনা খাবার ১,০০০ প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি
বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
- পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১৫,৪২২ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৮৭,৭১৮ জন;
- আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ১১৭টি;
- আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭,২৭৭ জন এবং আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১,৬৯১টি;
- মেডিকেল টিম চালু ১৮ টি;
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ত্রাণ কার্য (চাল) ৮০০ মেঃটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।