চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা
চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
ডিবি হেফাজতে থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার মধ্যেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা প্রচারের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের এই প্লাটফর্ম।
সোমবার (২৯ জুলাই) প্লাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচির বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ঠাকুরগাঁওসহ সারাদেশব্যাপী আজকের (সোমবারের) কর্মসূচি বিক্ষোভ ও ছাত্রসমাবেশ সফল করার জন্য আমরা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও গণমানুষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
সেখানে আরও বলা হয়, দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তখনো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো মধ্যরাতে বাসাবাড়িতে রেইড ব্লকের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
সমন্বয়করা বলেন, বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে প্রতিদিনই নির্মমভাবে শিক্ষার্থীদের দমন-নিপীড়ন ও মানুষের জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় প্রচার করছে এবং মিডিয়ার সামনে দেওয়া সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মায়াকান্না প্রচার করছে।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল (মঙ্গলবার) লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি করার জন্য অনুরোধ করছি।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আপনারা মঙ্গলবারের কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করুন। আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, ছাত্রসমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন।
শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো-
১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহীদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ড্রাগ এডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩। ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহীদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪। সারাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টরদের পদত্যাগ করতে হবে।
৫। যে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সেনাসদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যে সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা পরিচালনা করেছে এবং যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
৬। দেশব্যাপী যেসব ছাত্র-নাগরিক শহীদ এবং আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭। সারাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনসহ সব দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।
৮। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সব ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।
৯। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না- এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। এরই মধ্যে গণগ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়করা ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।