সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতি পেল ভারত!
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক পণ্যের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) ভারত নিজেদের করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এসব পণ্যের মধ্যে সুন্দরবনের মধু ও টাঙ্গাইলের শাড়ি অন্যতম। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি, অবহেলা, অবজ্ঞা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এভাবে বাংলাদেশের পণ্য ভারত তাদের পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করছে বলে অভিযোগ সংস্থাটির।
বুধবার (২৬ জুন) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে 'সুন্দরবনের মধু এখন ভারতের জিআই পণ্য' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত মে মাসে ভারতের প্রশিমবঙ্গের বন বিভাগের পেজ থেকে একটি টুইট করা হয়। সেখানে বলা হয়, সুন্দরবনের মধুর একক ও অদ্বিতীয় প্রতিনিধি হল ভারত। অথচ সুন্দরবনের মধুর বেশি অংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তাহলে কিভাবে অন্য প্রতিবেশী সুন্দরবনের মধুকে একক প্রতিনিধি হিসেবে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে প্রচার করার সুযোগ পেল?
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সুন্দরবনের মধুকে জিআই হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। ৭ বছর হয়ে গেলেও জিআই হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। এজন্য কাকে দোষ দেবেন? ভারত ২০২১ সালে আবেদন করে জিআই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দ্রুততার সঙ্গে তারা করেছে বলে তাদের দোষ দেবেন? নাকি আমাদের করা হয়নি সেটাকে দোষ দেবেন? এটা চিন্তার বিষয়।
তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রশাসনিক অবহেলা, অবজ্ঞা, অন্যায় ঘটলো। আমাদের আবেদন করা হয়েছিল ভারতেরও চার বছর আগে। অথচ জিআই করা হয়নি। এই ধরণের প্রশাসনিক আমলাতান্ত্রিক অবহেলার দায় কে নেবে? ভারতে অনেক পণ্য আছে যেগুলো তাদের জিআই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত আছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সুন্দরবনের মধুর জিআই হিসেবে যখন ভারতে ঘোষণা হয়েছে, তখন সময় ছিল আপত্তি জানানোর। কিন্তু আমাদের দেশের পক্ষ থেকে আপত্তি দেয়া হয়নি। আমরা যে নিজেদেরটা করিনি তা নয়, ওদের ওখানে যে বাগড়া দেবো তাও করা হয়নি। দুই জায়গাতেই আমাদের গাফিলতি। এটা জামদানির শুনানির জন্যও সময় ছিল কিন্তু তখনও আপত্তি জানানো হয়নি। একইসঙ্গে আমাদের দেশে জিআই ঘোষণা করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সুত্রিতায় যাওয়া হয়েছে। এটা খুব পরিষ্কার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়ায় ভারত টাঙ্গাইলের শাড়ি তাদের জিআই হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এখন আবার সুন্দরবনের মধুকে তারা করেছে। এর একটাই তাৎপর্য, আমাদের দেশের যেগুলো ঐতিহ্যবাহী পণ্য আছে, সেগুলোকে যদি ভৌগলিক নির্দেশকের আওতায় না আনি তাহলে আমাদের নিজেদের পণ্য, নিজেদের বলে দাবি করতে পারবো না। আমাদের পণ্য একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজশাহীর আম, সুন্দরবনের মধু, টাঙ্গাইলের শাড়ি, সোনারগাঁয়ের জামদানিসহ বহু পণ্য। এগুলোকে যদি একের পর এক তালিকাভুক্ত করে জিআই'র অধীনে না আনি তাহলে সবাই (অন্য দেশ) নিয়ে নিবে। কারণ তারা একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যায়। আমাদের বিষয় হয়, যখন তারা নিয়ে নেয় তখন আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। এজন্য শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও জিআইর জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিপিডি সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েটস নাইমা জাহান তৃষা প্রমূখ।