কারও কাছে ভিক্ষা করে দেশের মানুষ চলবে না : প্রধানমন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত
কারও কাছে ভিক্ষা করে দেশের মানুষ চলবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৯ মে) বেলা ১১টায় ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলে তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমি কৃষির ওপর গুরুত্ব দিই, আদালা বাজেট রাখি। সে সময় প্রথম দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। ২০০৯ আবার ক্ষমতায় এসে দেখি দেশ খাদ্য সংকটে। এখানে নীতির ব্যাপারে একটা প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, যেদিন আমি সংসদে বলেছিলাম দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তখন বিরোধী দলের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। তখন আমি উঠে বললাম, কারও কাছে ভিক্ষা করে দেশের মানুষ চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আমরা সম্মান নিয়ে চলতে চাই। কারণ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই সোনার মাটি আর মানুষ দিয়েই তো আমি সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি মানুষের উদ্যোম এবং কর্ম ক্ষমতাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে এই সোনার মানুষগুলোই তো উপযুক্ত হবে এবং সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯-২৩ এ বাংলাদেশ বদলে গেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। তারই পাশাপাশি শিল্পায়ন করতে হবে। মানুষের উদ্যম কাজে লাগাতে পারলেই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে। এসএমই উদ্যোক্তারা একক বা যৌথভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। নারী-পুরুষকে সমানভাবে উদ্যোক্তা করতে পারলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, শিল্পকে পরিবেশবান্ধব হতে হবে। শিল্পখাত একান্তভাবে পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত। যারা যেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, যেন শিল্পের বর্জ্য নদীতে না পড়ে। আমাদের পানি যেন কোনোরকম দূষিত না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। অল্প খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশজ উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
পণ্য বাজারজাতকরণের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু পণ্য উৎপাদন করলেই হবে না। পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য বাজারজাতকরণের দিকেও নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, এবং মহামারি করোনার কারণে সমস্ত কাজ বন্ধ, রপ্তানি বন্ধ, আমদানি বন্ধ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি এবং নানারকম সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও এ ধাক্কাটা এসে পড়েছে। এর সাথে যুক্ত আছে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের যুদ্ধ। বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো আমদানি করতে হয় তার প্রত্যেকটার দাম বেড়েছে। যার একটা প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। এটা শুধু করতে পারব, যখন আমরা নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে পারব।
অনুষ্ঠানে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৩ বিজয়ী সাতজন মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও স্টার্ট আপ উদ্যোক্তাকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেন প্রধানমন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন।
সাত দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। শুধু দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি করা পণ্য নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এসএমই ফাউন্ডেশন মেলার আয়োজন করেছে। এতে ৩৫০টির বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেবে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা।