খালি হচ্ছে দুদকের তিন মহাপরিচালকের পদ
ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আট মহাপরিচালক (ডিজি) পদের মধ্যে খালি খালি হতে যাচ্ছে তিনটি পদ। এর মধ্যে অবসরে যাবেন মহাপরিচালক (ডিজি) সৈয়দ ইকবাল হোসেন এবং পদোন্নতি পেয়েছেন দুজন। পদোন্নতি পাওয়া দুজনের মধ্যে মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজওয়ানুর রহমানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ও দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যের কমিশনের জনবল কাঠামোয় একজন সচিব ও আট ডিজি আলাদা দায়িত্ব পালন করেন। এ আটজনের মধ্যে নিজস্ব জনবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া ডিজি তিনজন। এ তিনজনের মধ্যে একজন (সৈয়দ ইকবাল হোসেন) আগামী ৩০ এপ্রিল অবসরে যাবেন। বিধি অনুযায়ী প্রেষণে আসা কর্মকর্তার কার্যকাল তিন বছর হলেও দুজন ডিজি চার বছর অতিক্রম করেছেন। তাছাড়া ডিজির পদ যুগ্ম সচিবের সমমর্যাদার হলেও দুজন (মো. জাকির হোসেন ও মো. রেজানুর রহমান) অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে পদায়ন হলেই শূন্য হবে এ পদ দুটিও। সব মিলিয়ে তিনজন ডিজির দপ্তর খালি হবে।
দুদকের অনুবিভাগগুলো হলো মহাপরিচালক (লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন), মহাপরিচালক (তদন্ত-২), মহাপরিচালক (তদন্ত-১), মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং), মহাপরিচালক (প্রশাসন), মহাপরিচালক (প্রতিরোধ), মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) ও মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি)। এ তিন অনুবিভাগের মধ্যে মহাপরিচালক (প্রতিরোধ), মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) ও মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি) পদে দুদকের নিজস্ব জনবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া তিন ডিজি দায়িত্ব পালন করছেন। মহাপরিচালক (লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন) পদ ছাড়া বাকি চারটিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেয়া মো. আক্তার হোসেন, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ও সৈয়দ ইকবাল হোসেন ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ডিজি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে সৈয়দ ইকবাল হোসেন আগামী ৩০ এপ্রিল, মো. আক্তার হোসেন ২০২৬ সালের ১৪ মে ও মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ২০২৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিজি পদ থেকে অবসরে যাবেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাকির হোসেন ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. রেজানুর রহমান দুদকের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। মো. জাকির হোসেন মহাপরিচালক (তদন্ত-২) ও মো. রেজানুর রহমান মহাপরিচালকের (তদন্ত-১) দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দুজনেরই দুদকে চার বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। তারা এরই মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিও পেয়েছেন। এছাড়া মহাপরিচালক (প্রশাসন) পদে রেজওয়ানুর রহমান ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি যোগ দেন। তিনিও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সম্প্রতি তাকে বদলি করা হয়। আর মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) পদে মো. মোকাম্মেল হককে গত বছর ১০ এপ্রিল নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিনিও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
দুদক চাকরি বিধিমালা-২০০৮-এ প্রেষণে নিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে, (১) তফসিলের বিধান সাপেক্ষে কোনো পদে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশন সরকার, ব্যাংক বা বিধিবদ্ধ সংস্থা কিংবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত কর্মচারীকে শর্তাধীনে নিয়োগ করতে পারবে। (২) প্রেষণে নিয়োগের শর্তাবলিতে থাকবে (ক) প্রেষণের সময় ব্যতিক্রম ছাড়া তিন বছরের বেশি হবে না ও (খ) মাতৃসংস্থার চাকরিতে কর্মকর্তার পূর্বস্বত্ব থাকবে এবং প্রেষণের সময় শেষ হওয়ার পর অথবা এর আগে অবসান ঘটলে তিনি মাতৃসংস্থার চাকরিতে ফিরে যাবেন।
দুদকে ১৯৯৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর যোগ দেয়া শিরিন পারভীন ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর পরিচালক পদে পদোন্নতি পান। তিনি আগামী ৩০ নভেম্বর অবসরে যাবেন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন মো. আব্দুল গাফফার। ১৯৯৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর যোগ দিয়ে তিনি পরিচালক পদে পদোন্নতি পান ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরের বিভিন্ন তারিখে মো. আব্দুল করিম, আব্দুল্লাহ-আল-জাহিদ, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, মো. কামরুল আহসান, মো. মঞ্জুর মোর্শেদ ও মো. বেনজীর আহম্মদ এবং ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে যোগ দেন গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও এসএম মফিদুল ইসলাম। মো. বেনজীর আহম্মদ ২০১৯ সালের এপ্রিলে এবং বাকি সবাই জানুয়ারিতে পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। মো. আব্দুল করিম ২০২৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর, আব্দুল্লাহ-আল-জাহিদ ২০২৬ সালের ১৬ জুলাই, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম ২০২৭ সালের ৩০ জুন, মো. কামরুল আহসান ২০২৫ সালের ৪ জুন, মো. মঞ্জুর মোর্শেদ ২০২৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, মো. বেনজীর আহম্মদ ২০২৬ সালের ২১ জুন, গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ ও এসএম মফিদুল ইসলাম ২০২৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। তারা সবাই মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য জ্যেষ্ঠতার তালিকায় রয়েছেন।
পদোন্নতি পেতে তাদের মধ্যে কেউ কেউ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন, যাচ্ছেন ওপর মহলে। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় থাকাদের মধ্যে দুদক চেয়ারম্যানের পছন্দের একজন ও রাষ্ট্রপতির পছন্দের একজন ডিজি পদে পদোন্নতি পেতে এগিয়ে রয়েছেন।
দুদকের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি) পদটিও খালি রয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় পরিচালক (চট্টগ্রাম) সফিকুর রহমান ভূইয়া অবসরে যাচ্ছেন। সে হিসেবে এ পরিচালক পদটিও খালি হচ্ছে। এছাড়া দুদকের ডিএমপি হিসেবে পরিচিত সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (ঢাকা-১) উপপরিচালক পদটিও খালি রয়েছে। সেখানকার উপপরিচালক সম্প্রতি পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।