সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ছবি: সংগৃহীত
চলমান বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অস্থিরতার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আইনমন্ত্রী সংসদে প্রশ্নোত্তরে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে বৈঠকের শুরুকে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।
মজিবুল হক চুন্নু সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী বাহিনীর অনেকটা যুদ্ধের মতো চলছে। যে কারণে সেখান থেকে সাধারণ মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রেবেশের চেষ্টা করছে। গোলাগুলি হচ্ছে। সেই গোলা এসে বাংলাদেশে পড়ছে।
তিনি বলেন, পত্রিকার খবর অনুযায়ী সেখানে (বাংলাদেশি সীমানায়) কিছু গোলাও পাওয়া গেছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জানতে চাই- আমাদের বর্ডার এবং স্থানীয় মানুষগুলোর নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ ব্যাপারে সরকার ওয়াকিবহাল আছে। আজ যে ঘটনা ঘটেছে, ৭৮ জন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) বাংলাদেশে চলে এসেছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু আহতও আছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের আপাতত একটা স্কুলে রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা আলোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই আলোচনার জন্য এবং তাদের (বিজিপি সদস্যদের) ফেরত পাঠানো বা ফেরত পাঠানো না গেলে অন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা নিয়ে কথা বলছি। গতকাল (রোববার) যেটা হয়েছিল, মর্টারশেলে আমাদের একজন মারা গেছে। ওদেরও একজন মারা গেছে। চলমান এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বা প্যারামিলিটারি বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বর্ডারের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে বান্দরবানে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা নাগরিক নিহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাছিনা বেগম (৫২) ওই এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী। নিহত রোহিঙ্গা পুরুষের (৫৫) পরিচয় জানা যায়নি।
সোমবার মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর আরও বেশ কয়েকটি ঘাঁটি দখল করেছে বিদ্রোহীরা। এছাড়া গত তিন দিনে বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে দেশটির অন্তত ৬২ জন সেনা। মিয়ানমারজুড়ে হামলা জোরদার করেছে দেশটির জাতিগত বিদ্রোহীরা।
গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জান্তার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এ সংঘাত বেড়ে যায়।