ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে শতাধিক নোবেলজয়ীর চিঠি
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেলজয়ীসহ ২৪২ বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। সেইসঙ্গে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায় এবং দুদকের মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। চিঠিতে এ দুটি মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। এ নিয়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ঘিরে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠালেন বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা।
চিঠিটি সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এ বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রোটেক্ট ইউনূস নামে একটি ওয়েবসাইট। এতে বলা হয়, শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১ জানুয়ারি আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই চিঠি লেখা হয়েছে।
প্রকাশিত চিঠিতে বলা হয়, ড. ইউনূসকে হয়রানি নিয়ে দ্বিতীয় দফার খোলা চিঠিতে ১০৮ নোবেলজয়ীসহ বিশ্বের ১৯০ জনের বেশি নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এরপর গত বছরের আগস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে মামলা, তার সব দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক। সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি, তারা নিজেরাই দেখুক। তাদের এসে দেখা দরকার, কী কী অসামঞ্জস্য আছে।’
এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনার ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। (বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের) এই পর্যালোচনা শুধু ১ জানুয়ারি রায় হওয়া শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা ঘিরে করলেই হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি ঘিরেও করতে হবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এই পর্যালোচনার জন্য আমরা একজন জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক আইনজীবীর নেতৃত্বে স্বাধীন আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছি। আমরা দ্রুতই এটা শুরু করতে চাই। একই সঙ্গে পর্যালোচনা চলাকালে ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এবারের চিঠিতে মোট স্বাক্ষরকারী ২৪২ জনের মধ্যে নোবেলজয়ী রয়েছেন ১২৫ জন। এরমধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, আল গোর, তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসসহ ১৬ জন। এছাড়া ওরহান পামুক, জে এম কোয়েটজিসহ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ৬ জন, জোসেফ স্টিগলিৎজসহ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ১২ জন, রসায়নে নোবেল বিজয়ী ৩৬ জন, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ী ২৯ জন, এবং পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন ২৬ জন।
এছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের তালিকায়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সামরিক কমান্ডারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।
চিঠিতে ড. ইউনূসের বিভিন্ন অর্জনের বিষয়ে বলা হয়েছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পাওয়া বিশ্বের মাত্র সাতজন ব্যক্তির একজন হচ্ছেন ড. ইউনূস। ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকসের সময় তাকে অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২৩ সালে সৌদি আরবে ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। এ ছাড়া স্বাধীনভাবে করা গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে ড. ইউনূসের কাজের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু মানুষের জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
খোলা চিঠিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গও আনা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলের নেতাদের ওপর দমনপীড়ন চালানো হয়েছে এবং তাদের কারাবন্দী করা হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যম ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও বিদেশে বিভিন্ন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠী এসব তথ্য উল্লেখ করেছে।