মামলা কি সরকার করলো, নাকি শ্রমিক: প্রশ্ন ড. ইউনূসের
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমার দিক থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, সরকার বারবার বলছে, সকল পর্যায়ে থেকে- এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা (সাংবাদিক) তো সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করলো, নাকি শ্রমিক করলো? জবাবটা আমাকে দেন।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করার পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন রাখেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের আরও বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর তো সরকারি, সরকারের অধীন। শ্রমিক তো কোনো মামলা করেনি, সেটা আপনারা বলেন।
এসময় ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আপিলে বাতিল হবে নিম্ন আদালতের সাজা। তিনি বলেন, আজকের আদালত আমাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ রায়কে সাসপেন্ড করেছে। একইসঙ্গে আগামী ৩ মার্চ নিম্ন আদালতের সেসব নথি আনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। আর আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা আদালতে জামিন প্রার্থনা এবং আপিল করেছি। রাষ্ট্রীয় সর্বমহলে এমনকি বিদেশিদের কাছেও বলা হচ্ছে, এ মামলা সরকার করে নাই। এ মামলা শ্রমিক করেছে। কিন্তু ঘটনাটা সঠিক নয়। সরকার তার প্রতিষ্ঠান কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ মামলা করেছে। শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা হয় নাই, বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয় নাই এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশ দেওয়া হয়নি- এমন তথ্য দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ মামলা করেছে। এ মামলায় যে রায় হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৩০৭ ধারা অনুযায়ী এ মামলায় শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। কারণ লেবার আইনের ২৩৬ ধারা অনুযায়ীই এ মামলার শাস্তির বিধান আছে।
এ ধারাতেই বলা আছে, যদি বকেয়া থাকে তাহলে সেটা পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। এটা না করলে ১ লাখ টাকা জরিমানা, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে। পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি আইন অনুযায়ী এটা আদায় করা হবে। কিন্তু সেসব ভায়োলেট করে বিশ্বের কাছে নন্দিত নোবেলজয়ী ড. ইউনূস ও তার বন্ধুদের সামাজিক ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে খুরশিদ আলম খানকে আইনজীবী নিয়োগ করেছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। তিনি জানান, অনুমতি ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে আবেদন করা হবে আদালতে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সাজা বিরুদ্ধে রবিবার সকাল ১০টায় শ্রম অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করার পাশাপাশি জামিন প্রার্থনা করেন ড. ইউনূসসহ চার জন। পরে বিচারক মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের স্থায়ী জামিন দেন। এসময় আপিলে ড. ইউনূসের পক্ষে ২৫টি আইনি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, আজ সকালে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে চারজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।