১ বছরে ৫১৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, সবচেয়ে বেশি স্কুল শিক্ষার্থী কারণ 'অভিমান'
ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালে দেশে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ১৬৫ জনই অভিমান থেকে আত্মহননের পথ বেছে নেন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে সারাদেশে আত্মহত্যা করা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২ জন। সেই হিসাবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী সংখ্যা কাছাকাছি।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে জানানো হয়, দেশের ১০৫টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ২২৭ জন (৪৪.২ শতাংশ), কলেজ শিক্ষার্থী ১৪০ জন (২৭.২ শতাংশ), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯.১ শতাংশ) এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৪ শতাংশ)।
আত্মহত্যা করা মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ২০৪ জন, শতাংশের হিসাবে যা ৩৯.৮ শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্রী ৩০৯ জন, যা ৬০.২ শতাংশ। ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী ছিল ৫৩২ জন। ২০২৩ সালে কিছুটা কমলেও ততটা আশানুরূপ নয়।
২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অভিমান, যা সংখ্যায় ১৬৫ জন (৩২.২ শতাংশ)। এরপরেই প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে ১৪.৮ শতাংশ। মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন ৯.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, পারিবারিক কলহে ৬.২ শতাংশ, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ১.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।
২০২৩ সালে পড়াশোনার চাপের সম্মুখীন হয়ে আত্মহত্যার দিকে পা বাড়িয়েছেন ৪.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ৩.৫ শতাংশ এবং পাবলিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়ে বেঁচে থাকার পথ রুদ্ধ করেন ১.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ২.৫ শতাংশ। অপমান বোধ করে ০.৮ শতাংশ আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যা কমাতে আঁচলের প্রস্তাব:
১. স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার করে মেন্টাল হেলথ স্ক্রিনিং করা।
২. প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে মেন্টর নির্ধারণ করা এবং মেন্টর ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে মেন্টাল হেলথ কর্নার চালু করা।
৪. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্তকরণ।
৫. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ট্যাবু ভাঙতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম চালু করা।
৬. পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পাঠ শেখানো।
৭. যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের কৌশল, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো।
৮. শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যদের আত্মহত্যা সতর্কতা চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত করা। এতে সম্ভাব্য আত্মহত্যাকারীকে বাঁচানো যাবে।
৯. মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা যেন, তা সবার জন্য সাশ্রয়ী হয়।
১০. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে একটি টোল ফ্রি জাতীয় হটলাইন নম্বর চালু করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।