সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মারা গেছেন
ছবি: সংগৃহীত
বিশিষ্ট শিল্পপতি সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সদ্য স্বাধীন দেশে ফজলুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন সরিষার তেল উৎপাদনের কারখানা সিটি অয়েল মিল, যা পরে সিটি গ্রুপের রূপ নেয়।
শুরুর দিকটা কঠিন হলেও ধীরে ধীরে বাজারে ভালো অবস্থান তৈরি করে সেই কোম্পানি। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে সিটি গ্রুপ সয়াবিন তেল আমদানি করে পরিশোধনের পর দেশে বিক্রি শুরু করে। এরপর এ কোম্পানির ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে তীর ব্র্যান্ডের অধীনে আটা, ময়দা, সুজি উৎপাদন শুরু করে সিটি গ্রুপ।
এরপর প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ইস্পাত, প্লাস্টিক পণ্য, বোতলজাত পানি, পরিশোধিত পাম তেল, পোল্ট্রি ও ফিশ ফিড, সয়ামিল, চিনি ও লবণ পরিশোধন, চাল, ডাল ও ময়দার স্বয়ংক্রিয় মিল, নৌপথে পণ্য পরিবহন, চা বাগান, হাসপাতাল, মিডিয়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় যুক্ত হয় সিটি গ্রুপ। ২০১৮ সালে এ কোম্পানি নারায়ণগঞ্জে ৭৮ একর জমির ওপর সিটি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার অনুমোদন পায়।
বর্তমানে এ শিল্পগোষ্ঠীটির অধীনে ৪০টির বেশি কোম্পনি রয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। সিটি গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া ও নেপালে ময়দা, তেলসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে সিটি গ্রুপ।
পাঁচ দশকে ফজলুর রহমান গ্রুপের ব্যবসা প্রসারিত করে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়, দেশীয় খাদ্য শিল্পকে নিয়ে গেছেন গতানুগতিক ব্যবসা গণ্ডির বাইরে। এছাড়াও প্যাকেজিং, শক্তি, ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণের ব্যবসা এবং শিল্প প্রকল্পে (সিটি ইকোনমিক জোন) কোম্পানির ব্যবসার প্রসার ঘটান। ফজলুর রহমানের ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং পরিশ্রমের ফলে দেশের বৃহত্তম এফএমসিজি ব্র্যান্ড ‘তীর’ তৈরি হয়েছে। তীর কেবল দেশেই পুরস্কার পায়নি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। তিনি পুরান ঢাকার জনগণের জন্য দেশের অন্যতম আধুনিক হাসপাতাল আজগর আলী হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন।
উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের কারণে ফজলুর রহমান পুরস্কার এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন কয়েকবার। তিনি ডিএইচএল-ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘বিজনেস পার্সন অফ দ্য ইয়ার ২০০৫’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ‘সেরা করদাতা’ হন ফজলুর রহমান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বীকৃত একজন বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) তিনি। ফজলুর রহমান বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এবং বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফজলুর রহমানের জন্ম ১৯৪৭ সালের ৬ মে।