বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না :প্রধানমন্ত্রী
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জিয়া পরিবারকে খুনি পরিবার আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া পরিবার মানেই হচ্ছে খুনি পরিবার। বাংলাদেশের মানুষ ওই খুনিকে ছাড়বে না। বাংলাদেশের মানুষ ওদের ছাড়বে না। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে যেখানে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়, সেখানেই সেদিনের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
৭৫–এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যায় জড়িত থাকায় জিয়া পরিবারকে ‘খুনি পরিবার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরেরও দাবি জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া পরিবার মানে হচ্ছে খুনি পরিবার। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেতা-কর্মীদের মানবঢাল প্রাণে বাঁচায় তাঁকে। কিন্তু নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী নিহত এবং প্রায় এক হাজারজন আহত হন। যার মধ্যে পাঁচ শতাধিক নেতা–কর্মী গুরুতর আহত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে, যার মূল হোতাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান। আর খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ তাদের দোসর জামায়াতে ইসলামী এবং ’৭১–এর যুদ্ধাপরাধীরা এখনো সে কাজই করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। মানুষ ন্যায়বিচার পায়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হচ্ছে।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, একুশ আগস্ট হত্যার বিচার হয়েছে। রায় হয়েছে। কাজেই এই রায় কার্যকর করা উচিত। কিছু আছে কারাগারে। কিন্তু মূল হোতা তো বাইরে। সে তো মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। তো সাহস থাকলে আসে না কেন বাংলাদেশে?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই সুযোগ নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে। আর কত হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে চলে গেছে সেই টাকা খরচ করে। তো সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক। ওদের কিছু লোক হয়। সেই দেখে লম্ফঝম্ফ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চেনেনি। এই বাংলাদেশে খুনিদের রাজত্ব আর চলবে না।’
২১ আগস্ট আহতদের জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কাছে বলেন কী করে ওই খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া আপনাদের জীবনটাকে ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশ লুটপাট করেছে। স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছে। নিজেরা অর্থসম্পদের মালিক হয়েছে।
দেশবাসীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সজাগ থাকবে। ওই খুনিদের হাতে যেন এ দেশের মানুষ আর নিগৃহীত হতে না পারে। অগ্নি-সন্ত্রাস আর জুলুমবাজি করে এ দেশের মানুষকে হত্যা করতে না পারে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। খুনি, দুষ্কৃতকারী, অস্ত্র চোরাকারবারি, ঘুষখোররা যেন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ওই খুনিদের প্রতি ঘৃণা সকল জনগণের। সকলে তাদের ঘৃণা জানাবে। সবাই নিরাপদ থাকেন ভালো থাকেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ বেছে আছি এ দেশের মানুষের সেবা করে উন্নত জীবন দিয়ে যাব। মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তারা ভোটের অধিকারের কথা বলে, আর কিছু আছে তাদের ভাড়া করা—তারা মানবাধিকারের কথা বলে। যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নে তোলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? আমরা যাঁরা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী তাদের আপনজন হারিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের কাছে তাদের মানবাধিকার কোথায়? আমরা বিচার পাইনি। আমরা কেন বিচার বঞ্চিত ছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা দেখি বাংলাদেশের মানবাধিকারের কথা বলে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? তাদের শেখানো বুলি যারা বলেন—এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বারবার হয়েছে। যার মূল হোতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়াসহ জামায়াত যুদ্ধাপরাধীরা। তারা এখনো করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষ ন্যায়বিচার পায়। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার আমরা করি। কিন্তু আমরা তো বিচার পাইনি। কেন ৩৩ বছর সময় লেগেছে বিচার পেতে। কী অপরাধ করেছিলাম যে আমরা বিচার পাইনি। বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।’ এ সময় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।