বহু প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
বহু প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির দুয়ার খুলল। আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।
শুরুতে চার শ্রেণির ব্যক্তি পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসছেন। তারা হচ্ছেন- প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি।
আজ থেকেই দেশে ও দেশের বাইরে সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল। বৃদ্ধ বয়সে দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়।
এ লক্ষ্যে ১৩ আগস্ট ২০২৩-এ সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা ২০২৩-এর গেজেট জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী এই চূড়ান্ত বিধিমালায় প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী নামে চারটি স্কিম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় বেসরকারি চাকরিজীবীদের রাখা হয়েছে প্রগতি স্কিমের আওতায়। এতে সর্বনিম্ন চাঁদার হার ধরা হয়েছে ২০০০ টাকা। তবে ৩০০০ ও ৫০০০ টাকার চাঁদা প্রদানের সুযোগও রাখা হয়েছে। এই শ্রেণির পেনশনারদের চাঁদার ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং বাকি ৫০ শতাংশ নিজেরা পরিশোধ করার শর্ত রয়েছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান এ ব্যবস্থায় অংশ না নিলে ওই চাকরিজীবী নিজ উদ্যোগে এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। আর কৃষক, রিকশাচালক, কামার, কুমারসহ এরূপ স্বকর্মে নিয়োজিতদের রাখা হয় সুরক্ষা স্কিমে। এদের সর্বনিম্ন চাঁদার হার ১০০০ টাকা। এ ছাড়া ২০০০, ৩০০০ ও ৫০০০ টাকার স্কিমও রয়েছে তাদের জন্য। সমতা স্কিমে থাকবেন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীরা। এদের চাঁদার হার নির্ধারিত ১০০০ টাকা। তবে এই চাঁদার ৫০ শতাংশ সরকার বা পেনশন কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এ ছাড়া প্রবাস স্কিমে যে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক অংশগ্রহণ করবেন। তাদের ন্যূনতম মাসিক চাঁদা ৫০০০ টাকা। তবে ৭৫০০ ও ১০০০০ টাকারও পৃথক দুটি স্কিম রাখা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, ১৮-৫০ বয়সীরা এসব স্কিমে যুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন। অবশ্য ৫০ বছর ঊর্ধ্বসীমার মানুষও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। তবে সবাইকেই কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যেতে হবে। অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যে কোনো তপশিলি ব্যাংকের ওটিসি পদ্ধতিতে মাসিক চাঁদা জমা করবেন।
২০২০ সালে দেশে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ। এই সংখ্যা ২০৪১ সালে ৩ কোটি ১০ লাখ হবে বলে অনুমান করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে ধীরে ধীরে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো না থাকায় বৃদ্ধকালে তাদের জীবনযাপনে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। ওই সময় তাদের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেই বর্তমান সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে গতকাল বুধবার। ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.upension.gov.bd। এতে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে।