বাস কাউন্টারে টিকিট পেতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি!
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। বাস-লঞ্চ-ট্রেন যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন পরিবারের কাছে। অনেকেই পরিবারের কাছে যেতে পথে মধ্যে পড়েছেন নানা ধরনের ভোগান্তিতে। এ ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে যাত্রাপথের অতিরিক্ত ভাড়া। এ ছাড়া বাস কাউন্টারে টিকিট পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার তাড়ার কারণে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এ ছাড়া রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন রুটের বাসগুলোর টিকিট পেতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। তেমনি দালালের মাধ্যমে টিকিট মিললেও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোর যাত্রীরা কাউন্টারে এসে টিকিট পাচ্ছেন না। তারা টিকিট নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ করেছেন।
তবে যারা আগে থেকেই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা সমস্যার শিকার না হলেও অফলাইনে যারা টিকিট নিচ্ছেন তাদের অভিযোগে ও ভোগান্তির শেষ নেই।
প্রথম দিকে কাউন্টার মাস্টাররা টিকিট নেই বললেও অতিরিক্ত টাকা দিলেই যেকোনো মানের সিট পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মাগুরার যাত্রী পলাশ হাসান। তিনি বলেন, বাসের কাউন্টার থেকে যাত্রীদের সঙ্গে ছলচাতুরী করা হচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
নড়াইলের যাত্রী রহিম মিয়া বলেন, ভোর থেকেই সায়দাবাদ কাউন্টারে বসে মন মতো টিকিট ও গাড়ি পাচ্ছি না। গাড়ি মিললে ভাড়া চাই আগের থেকে দুই গুণ। ৫০০ টাকার ভাড়া হয়েছে ১ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে চরমভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমার মতো অন্যান্য যাত্রীদের যা দেখার কেউ নেই।
যশোরগামী যাত্রী খালেদ হোসেন বলেন, অনেক ঘুরাঘুরি করে অবশেষে সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে এসে টিকিট পেলাম। তবে ৬০০ টাকার ভাড়া ১ হাজার বা তার থেকেও বেশি চাচ্ছে। উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই টিকিট নিয়েছি। টাকা বেশি গেলেও বাড়িতে যেতে পারছি এটাই বড়।
তবে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়া, নড়াইল এক্সপ্রেস হানিফ, শ্যামলী, হিমাচল, রয়েল কোচ, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসসহ জনপ্রিয় পরিবহনগুলো গোপনে কিছুটা ভাড়া বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ একাধিক যাত্রীদের। তবে লোকাল গাড়িগুলোতে ‘গলা কাটা’ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ব্যাপক।
জানা যায়, লোকাল গাড়িগুলোতে সায়েদাবাদ থেকে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও খুলনার আশপাশের এলাকাগুলোতে ৯০০-১০০০ বা তারও বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা আগের তুলনায় ৩০০-৪০০ টাকা বেশি বলছেন যাত্রীরা।
রাজধানীর সায়েদাবাদে এসপি গোল্ডেন লাইন ও সেজুতি ট্রাভেলের কাউন্টার মাস্টার সমশের আলী বলেন, ঈদে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। যা নির্ধারিত রয়েছে তাই নেওয়া হচ্ছে। তবে ঈদের সময় ভাড়ার পরিমাণ একটু বাড়ে।
হানিফ কাউন্টার মাস্টার মিনহাজ বলেন, কোনোভাবেই টিকিট বিক্রিতে নয়-ছয় হচ্ছে না। যাত্রীদের অনেকেই অনলাইনে টিকিট কাটছেন। এখন যাত্রীরা বেশ সচেতন। তবে যারা এই রোড দিয়ে চলে না তারাই মূলত বলছে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।
নড়াইল এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার আলতাফ বলেন, আমাদের ভাড়ার পরিমাণ সব ঠিক আছে। অন্য পরিবহন যে ভাড়া নিচ্ছে আমরাও তাই নিচ্ছি। তবে ঈদের সময় যাত্রীবাহী বাস এক পাশ থেকে খালি আসে এজন্য সকল পরিবহনের ভাড়া সামান্য বাড়ানো হয়ে থাকে। ঈদ চলে গেলে ভাড়া আবার আগের মতো নেওয়া হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (মিডিয়) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নিয়তি রায় বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে ঈদের ছুটিতে ভালোভাবে তাদের গন্তব্যে যেতে পারে সেই ডিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদি কোনো বাস কাউন্টারে নিধারিত ভাড়ার থেকে বেশি টাকা নেই এবং সেসব বিষয়ে কোনো যাত্রী যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশকে জানায় তাহলে পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেই নিদর্শনা ডিএমপির সকল ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে।
কেএম/এসএন