ডেটিং অ্যাপে ‘মরণফাঁদ’, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ
ডেটিং অ্যাপ ও স্থপতি ইমতিয়াজের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত গ্রেপ্তার ৩
ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। টাকা আদায় করতে করা হচ্ছে অপহরণ ও জিম্মি। ঘটছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও। বিশেষ এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রধানত সমকামীদের টার্গেট করে চক্রটি। সম্প্রতি ডেটিং অ্যাপ নিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইমতিয়াজ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে পুলিশ এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে চক্রটির সম্পর্কে। ওই অ্যাপস ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (১ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. গোলাম সবুর বলেন, চক্রটির অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকে হয়ত লোকলজ্জার ভয়ে বলেনি। ঢাকা শহরে এ অ্যাপের সহস্রাধিক সদস্য রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ৭ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি ইন্টেরিয়ার ডিজাইনার ইমতিয়াজ। পরদিন তার স্ত্রী কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই দিন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ মার্চ পুলিশ মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করে। পরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহ দাফন করে। এ ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ইমতিয়াজের পরিবার ১৮ মার্চ মরদেহটি ইমতিয়াজের বলে নিশ্চিত হন।
এই চক্রটিতে একাধিক তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যও জড়িত রয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এই ঘটনাট ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, তাদের গ্রহণ করার জন্য আমার সমাজ প্রস্তুত নয়। কারণ আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে একটি বড় উপকরণ। আমার সমাজের মধ্যে প্রচলিত যে সামাজিক রীতিনীতি, বৈশিষ্ট্য ও জীবনাচরণ সেটি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এ ধরনের মানুষকে শিক্ষিত এবং নিরক্ষর কেউই স্বাভাবিক চোখে দেখে না।
তিনি বলেন, এ পুরো চক্রটিকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যথায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এদিকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে উঠে এসেছে, একটি বিশেষ অ্যাপে অনেক দিন ধরেই অ্যাকাউন্ট ছিল ইমতিয়াজের। একান্তে সময় কাটাতে গিয়ে চক্রটির ফাঁদে পড়েছিলেন তিনি। পরে টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় খুন করা হয় তাকে।
তিন জেলায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। পলাতক আরাফাত ওরফে ফয়সাল ও আলিফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
ডিসি গোলাম সবুর বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে তারা দেখেন আশপাশে কারা আছেন। তখন তারা পরস্পরকে নক করেন। তারপর মিলে গেলে তারা নিজেরা দেখা-সাক্ষাৎ করেন। এর মধ্যে একটি গ্রুপ আছে যারা তাদের নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে থাকে। এ চক্রটির কয়েকটি আলাদা আলাদা গ্রুপ রয়েছে। যার মধ্যে একটি গ্রুপের কাজ হলো ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।
কেএম/আরএ/