মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন নিয়ে ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তাকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জুলাই-আগস্ট শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ বছর যেন কোনো ভ্যালেন্টাইন দিবসের তামাশা না হয়।’
ফরিদা আখতারের এই মন্তব্য আসার পরই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তাঁর ওই পোস্টের সমালোচনা করে একের পর এক মন্তব্য আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে ওই পোস্টের কমেন্ট (মন্তব্য) অপশন বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর পোস্টে ৬৯৫টি মন্তব্য এসেছে। শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ৬০০। প্রতিক্রিয়া মোট ৭ হাজার ৪০০। এর মধ্যে ‘হা হা’ প্রতিক্রিয়া ৫ হাজার ৭০০।
এই পোস্টের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, এখানে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এটা ছিল আমার একটা আহ্বান। একটা শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে এই অনুরোধ আমাকে করা হয়েছিল এবং এটা আমি ফিল করি। আমি মন থেকে ফিল করি, ভ্যালেন্টাইন দিবস আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। ভালোবাসা দিবস আপনি সারা বছর করতে পারেন। ভ্যালেন্টাইন দিবস নিয়ে আগে থেকেই অনেক সমালোচনা ছিল। এটা আমি স্ট্রংলি ফিল করি, এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়।’
ফরিদা আখতার আরও বলেন, ‘আমরা ফাল্গুন পালন করব, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করব। কিন্তু এ বছরটা যেহেতু একটা বিশেষ পরিস্থিতি এবং সে পরিস্থিতি আনন্দের নয়; এতগুলো শহীদ ও আহত মানুষের কথা আমরা কোনোক্ষণেই ভুলতে পারি না।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই দিনে অনেক কিছু অতিরিক্ত হয়। যেন তামাশা আকারে না করা হয়, তাই আমি আহ্বান জানিয়েছি।’
ফরিদা আখতারের পোস্টে প্রতিক্রিয়ায় একটি মন্তব্য এসেছে এমন, ‘আপা, ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস বহুকাল আগের থেকেই। এবার ৪২ বছর হবে।
‘পুনশ্চ: আমার ভয় হচ্ছে আপা, আপনার এই কমেন্টের ফলে এক সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠী মব করার বৈধতা পেয়ে গেল। এখন কোনো মানুষ যদি তার সঙ্গীকে নিয়ে এই দিবসে ভালোবাসা হিসেবে উদ্যাপিত করতে চায়, তাকে “জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী” বলে পেটানোর ঘটনা ঘটলে, সেই দায়টা কে নিবে?’
তাঁর মন্তব্যের মাধ্যমে এভাবে মবকে উসকানি দেওয়া হয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, ‘এটার সঙ্গে উসকানির কী সম্পর্ক আছে। আমি তো শ্রদ্ধা জানাতে বলেছি। কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। আমার এই মন্তব্যের পর ওদের ওপর কি কেউ আক্রমণ করবে বলে আপনি মনে করেছেন? বাংলাদেশকে অত খারাপ ভাবার তো কোনো অর্থ নেই। যদি মব উসকানি হয়, তবে যারা এই উসকানি করবে, সেটা তাদের দায়দায়িত্ব।’
ওই ফেসবুক পোস্টে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘কেউ যদি ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে চায় আর সরকার বা যেকোনো গোষ্ঠী যদি তাতে বাধা দেয়, সেটাও তো ফ্যাসিবাদী আচরণ আপা।’
আরেকেজন লিখেছেন, ‘জন্ম, মৃত্যু, বিপ্লব, আহত-নিহত হওয়া, সংঘাত, শোক ও আনন্দ—সবই জীবনের অংশ। প্রতিদিনই কেউ না কেউ স্বজন হারাচ্ছে। সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, ইউক্রেনে প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে। এ দেশেও প্রতিদিন শোক করবার মতো ঘটনা ঘটছে। তাই বলে জগতে কেউ আনন্দ করবে না? সারা জীবন কাঁদতে থাকব? শোক ও উদ্যাপন পাশাপাশি চলতে পারে বলে মনে করি। যার শোক করবার সে শোক করুক। যার আনন্দ করবার সে আনন্দ করুক। চাপিয়ে দেওয়া কেন?’
একজন লিখেছেন, ‘ভালেন্টাইন দিবস তো কোনো জাতীয় দিবস না, এইটা ভালোবাসার প্রকাশে সারা বিশ্বের মানুষ ব্যক্তিগত বা সামাজিকভাবে উদ্যাপন করে। এই নিয়ে আমাদের ক্রিটিক থাকতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসরে ভালোবাসার মতো বিষয়কে উদ্যাপনের উপরে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের মরাল পুলিশিংয়ের বৈধতা থাকতে পারে না। এইটা তো জুলুম।’
এসব মন্তব্য নিয়ে ফরিদা আখতার বলছিলেন, ‘এটা যারা করতে চায় (দিবস উদ্যাপন) তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমি অবাক হয়েছি। আমি খুব অবাক হয়েছি যে মানুষ এত হীন চিন্তা করতে পারে। শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বললেও রিঅ্যাকশন হয়, এটা আমাদের ধারণার বাইরে। তাহলে এরা কি জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছে, তাদের শ্রদ্ধা করতে চায় না, সেটাই তারা বলুক। এসব মন্তব্যের মাধ্যমে তারা জুলাই ও আগস্টের শহীদদের প্রতি অবমাননা করছে। আমি এখনো মনে করি, আমি যে কথা বলেছি, সেটার মধ্যে আমি আছি।’