শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

দুর্নীতির শীর্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও পাসপোর্ট: টিআইবি

বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা শীর্ষে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এরপর শীর্ষ তিনে থাকা অপর দুটি সংস্থা হলো পাসপোর্ট ও বিআরটিএ।

মোট ১৭টি খাতের মধ্যে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাসপোর্ট বিআরটিএ। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সেবাখাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২১’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো ফারহানা রহমান ও মোহাম্মদ নূরে আলম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জরিপে অন্তর্ভুক্ত ঘুষদাতা খানার ৭২ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, “ঘুষ না দিলে সেবা পাওয়া যায় না”। অর্থাৎ ঘুষ আদায়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। সার্বিকভাবে খানা প্রতি গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৩০ দশমিক ১ কোটি টাকা।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে সার্বিকভাবে উত্তরদাতাদের ৭০.৯ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিলো ৬৬.৫ শতাংশ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বরাবরের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। অন্য যে সকল খাতে দুর্নীতির শিকার হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি তার মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট সেবা, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, ভূমি, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার খাত।

আরও উদ্বেগের বিষয় এই যে, যে সকল খানা সেবা পেতে গিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের ৭২ শতাংশের বেশি উত্তরদাতার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ঘুষ দেওয়া ছাড়া সেবা পাওয়া অসম্ভব। অর্থাৎ সেবাখাতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে যদিও দুর্নীতির ফলে সকল শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে প্রতিবন্ধী, গ্রামাঞ্চলের ও নিম্ন আয়ের খানা অর্থাৎ প্রান্তিক জনগনের ওপর এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। সরকারি কর্মকর্তাদেরকেও উল্লেখযোগ্য হারে দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছে। আবার যারা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা তারা চাকুরিরত কর্মকর্তাদের তুলনায় বেশি হারে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পৃথিবীর সকল দেশেই সেবাখাতে দুর্নীতি হয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকর প্রয়োগ আমাদের দেশে দেখা যায় না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা থাকলেও, তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছেন তারা সেটি করছেন না, বরং লঙ্ঘন করছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের প্রক্রিয়া পর্যাপ্ত নয়, যেটুকুও আছে সেটির ওপরও মানুষের আস্থার অভাব লক্ষণীয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা রয়েছে, তার কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সারা দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে পারলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”

সেবাখাতে দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি পরিচালিত নবম খানা জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত সাত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (৭৪.৪ শতাংশ), পাসপোর্ট (৭০.৫ শতাংশ), বিআরটিএ (৬৮.৩ শতাংশ) বিচারিক সেবা (৫৬.৮ শতাংশ), স্বাস্থ্যসেবা (৪৮.৭ শতাংশ), স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান (৪৬.৬ শতাংশ) এবং ভূমি সেবা (৪৬.৩ শতাংশ)। অন্যদিকে ২০২১ সালে সার্বিকভাবে ঘুষের শিকার হওয়া খানার হার ৪০ দশমিক ১ শতাংশ, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঘুষ গ্রহণকারী তিনটি খাত হচ্ছে পাসপোর্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও বিআরটিএ। ২০২১ সালে সার্বিকভাবে খানা প্রতি গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে এবং সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি খাত হল বীমা, বিচারিক ও গ্যাস সেবা। জাতীয় পর্যায়ে প্রাক্কলিত মোট ঘুষের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮৩০ দশমিক ১ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশে জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

জরিপের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সার্বিকভাবে ২০১৭ সালের তুলনায় সেবাখাতে দুর্নীতির শিকার খানার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থের হার কমেছে, কিন্তু ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। অপরদিকে অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে সেবাখাতে দুর্নীতি বেড়েছে।

বিভিন্ন খাতে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কোনো কোনো সেবাখাতে তা পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় দুর্নীতি একই অবস্থায় রয়েছে (যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পাসপোর্ট, বিআরটিএ ইত্যাদি) এবং কিছু খাতে বৃদ্ধি পেয়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিমা ইত্যাদি)। এছাড়া, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে কোনো কোনো খাতে ঘুষের শিকার খানার হার বেড়েছে (স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান) এবং কোনো কোনো খাতে কমেছে (কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা)।

জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘুষের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী খানার শিকার হওয়ার হার বেশি (৩৬.৬ শতাংশ বনাম ৪৬.৫ শতাংশ)। উচ্চ আয়ের তুলনায় নিম্ন আয়ের খানার ওপর দুর্নীতির বোঝা অপেক্ষাকৃত বেশি। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে আরও পাওয়া যায়, পুরুষ সেবাগ্রহীতার তুলনায় নারী সেবাগ্রহীতারা কোনো কোনো খাতে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে (স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য খাত) এবং কোনো কোনো সেবাখাতে নারীদের তুলনায় পুরুষ সেবাগ্রহীতারা বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে (শিক্ষা, ভূমি সেবা)। এছাড়া ৩৫ বছরের নিচের সেবাগ্রহীতাদের তুলনায় ৩৬ ও এর বেশি বয়সের সেবাগ্রহীতারা অপেক্ষাকৃত বেশি দুর্নীতির শিকার হয়।

২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৮ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় জরিপটি পরিচালিত হয়। নির্বাচিত খানাগুলো ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবাখাতে সেবা গ্রহণের সময় যে সকল দুর্নীতি ও হয়রানির মুখোমুখি হয়েছে তার ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নীতি-নির্ধারণী এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য টিআইবির সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিভিন্ন সেবাখাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনানুগভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করা; সেবাগ্রহীতার সাথে সেবাদাতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হ্রাসে সকল সেবা ডিজিটালাইজ করা, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালু করা এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা; সেবাপ্রদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেবাপ্রদানকারীদের আচরণগত বিষয়গুলো জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন ও কার্যকর করা; বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত মানদন্ডের ওপর ভিত্তি করে পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া বন্ধ করা; সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানির মতো জনগণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

 

এনএইচবি/এমএমএ/

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত