রনির হলফনামায় পটুয়াখালীতে উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার উল্লেখ ছিল না
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. গোলাম মাওলা রনির সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার উল্লেখ ছিল না তার হলফনামাতে। প্রশাসন এই স্থাপনাকে অবৈধ স্থাপনা বললেও তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটা মূলত আমার পৈত্রিক বাড়ি। ১৯৬০ সাল থেকে আমার বাবা এখানে বসবাস করে আসছে।’
আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক এই সংসদ সদস্য সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। দুই নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দেয়া দুইটি হলফনামার কোনটিতেই পটুয়াখালীতে সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া এই ভবনের উল্লেখ নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে পটুয়াখালী–৩ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন মো. গোলাম মাওলা রনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর পটুয়াখালী নির্বাচনী কার্যালয়ে যে হলফনামা জমা দেন তিনি তাতে সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া পটুয়াখালীর ভবনের উল্লেখ নেই।
হলফনামায় তার স্থাবর সম্পদের কলামে ‘দালান (আবাসিক বা বানিজ্যিক) সংখ্যা, অবস্থান ও অর্জনকালীন সময়ে আর্থিক মূল্য’–এর জন্য নির্ধারিত ঘরে কোন কিছু লিখেননি তিনি। ‘বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা ও অর্জনকালীন সময়ে আর্থিক মূল্য’–এর কলামে লেখা আছে ‘৩টি, ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা’। আর ‘অকৃষি জমি ও অর্জনকালীন সময়ে আর্থিক মূল্য’ লেখা আছে ‘২টি প্লট মোট–৬৯ লাখ পাঁচ হাজার সাতশ টাকা’। এসব বিষয়ে তার স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের জন্য নির্ধারিত ঘরে কোন লেখা নেই।
এছাড়া ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মো. গোলাম মাওলা রনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই বছরের ২০ নভেম্বর স্থানীয় নির্বাচন অফিসে হলফনামা দাখিল করেন তিনি। হলফনামার ফর্মে ‘স্থাবর সম্পদ’-এর কলামে তিনি ‘দালান, আবাসিক/বানিজ্যিক সংখ্যা অবস্থান ও অর্জনকালীন সময়ের আর্থিক মূল্য’–এর ঘরে তিনি লিখেছেন ‘বানিজ্যিক ২টি, ৬ কোটি টাকা’। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা ও অর্জন কালীন সময়ের আর্থিক মূল্য’ লিখেছেন ‘আবাসিক ৬০ লাখ টাকা’।
আর ’অকৃষি জমি ও অর্জনকালীন সময়ের আর্থিক মূল্য’ উল্লেখ করেন ‘দশমিক ৩৩ শতাংশ, মূল্য ১৮ লাখ’ টাকা।
উল্লেখ্য, বুধবার (২০ জুলাই) পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বন্দরে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, তার স্ত্রী-শ্যালকসহ পরিবারের সদস্যদের আটটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। একই এলাকায় আগের দিন মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) গোলাম মাওলা রনির বাসভবন গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
এর কারণ হিসেবে স্থানীয় ইউএনও আশিষ কুমার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে তাকে কয়েকবার নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু একাধিকবার নোটিশ পেয়েও সাবেক এই সংসদ সদস্য সরকারি জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেননি। এ জন্য সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন।
মঙ্গলবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোলাম মাওলা রনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটা মূলত আমার পৈত্রিক বাড়ি। ১৯৬০ সাল থেকে আমার বাবা এখানে বসবাস করে আসছে। এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করা হয়েছে। এরপরও কীভাবে তারা আমার বাবার বাড়িঘর উচ্ছেদ করছে তা আমি জানি না। আমি আদালতকে বিষয়টি অবহিত করব।
আদালতকে অবহিত করেছেন কিনা, এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মাওলা রনি বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আদালতকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তবে আইনি বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কোনো ফলাফল না আসা পর্যন্ত কোনো কিছু বলতে পারছি না বা বলা ঠিক হবে না।
হলফনামায় এই স্থাপনার উল্লেখ না থাকা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যখন আমি সংসদ সদস্য হই, তখন আমার বাবা ছিলেন এই ভবনের মালিক। তাই হলফনামায় তা উল্লেখ করা হয়নি।
২০১৮ সালের হলফনামায়ও এই স্থাপনার উল্লেখ নেই কেন? এই প্রশ্নের জবাবে, গোলাম মাওলা রনি বলেন, হলফনামায় উল্লেখ করতে হয় বড় মাপের সম্পত্তিগুলো। এটা তেমন বড় মাপের কিছু না।
এমএ/