দাহ্য পদার্থের আমদানি-রপ্তানি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়: সিপিডি
দাহ্য পদার্থ উৎপাদন থেকে শুরু করে মজুদ, শিপমেন্ট, বাজারজাতকরণ সব জায়গায় দুর্বলতা থেকে গেছে। এসব পদার্থের আমদানি ও রপ্তানি অসম্পূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে। এসব পদার্থের ব্যবস্থাপনায় কোনো রকম সেপটি ফ্রেম নাই। এই ব্যবসায় এনবিআর, বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। কিন্তু কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ কোনো দায় নিতে চায় না। তাই সমন্বয়ের জন্য একটি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ হওয়া দরকার।
বুধবার (২০ জুলাই) সিপিডির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি অফিসের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে রাসায়নিকের বিপদজনক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শিল্প নিরাপত্তা বিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও নারায়ণগঞ্জে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এসব দুর্ঘটনা শিল্পখাতের উন্নয়নের দুর্বলতা। এসব প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। শিল্পের নিরাপত্তায় এদের নজর দেওয়া দরকার। ৪ জুন চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোতে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সেটা শুধু অগ্নিকাণ্ড না।
এ দুর্ঘটনায় ৫১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১২ জনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। এতে ১১০ মিলিয়ন ক্ষতি হয়েছে। ৬ হাজার ৩০০ ধারণ ক্ষমতার কনটেইনার ডিপোতে ছিল ৪ হাজার ১৩৩ টি কনটেইনার। সেখানে ৬০০ কর্মী কাজ করতো। এছাড়া প্রায় দেড় হাজার লোকের আনাগোনা ছিল নিয়মিত। কারো কাছে কোনো সঠিক তথ্য না থাকায় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অথচ এসব দাহ্য পদার্থের ব্যবসায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস সবার অনুমোদন ছিল।
নিয়ম আছে ২০ কিলোমিটারের বাইরে এই ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো(আইসিডি) করার। কিন্তু এখানে কনটেইনার ডিপো করার ক্ষেত্রে সেটি মানা হয় না।
সিপিডি গবেষণা পরিচালক বলেন, দেশে অনেক দাহ্য পদার্থ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে ২৫১ টি প্রতিষ্ঠান এই উৎপাদন কাজের সঙ্গে জড়িত। তারপরেও ২০২১ সালে ৩০২ মিলিয়ন ইউরিয়া আমদানি করা হয়েছে। অন্যান্য দাহ্য পদার্থ আমদানি করা হচ্ছে। এসব পদার্থের উৎপাদন থেকে শুরু করে শিপমেন্ট, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ সব ক্ষেত্রে এনবিআর বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বিডা, ডিসি অফিসেরও অনুমোদন লাগে।
কিন্তু দুর্ঘটনার পর কেউ একেকভাবে দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তা কাঠামো অত্যন্ত জরুরি। দাহ্য পদার্থকে রেড ক্যাটাগরি শিল্প গণ্য করে রুলস ও রেগুলেশন করা দরকার। সেগুলো কার্যকর করাও দরকার। যাতে কোন অগ্নিদুর্ঘটনা আর না ঘটে। এসব নিয়মকানুনকে একত্রিত করে অর্থাৎ সমন্বয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যেন নিজের দায় এড়াতে না পারে। সমন্বয়কারী হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিডাও হতে পারে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের বাইরে আন্তর্জাতিকভাবেও কাজ করা উচিত। কারণ কেমিক্যাল শিল্প শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। দাহ্য পদার্থের ক্ষেত্রে শক্তিশালী পলিসি হওয়া দরকার। দূষণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের ক্ষেত্রে তৎপর হওয়া দরকার। নিজেদের অর্থনীতির শক্তিশালী দক্ষতা অর্জনের জন্য গ্লোবালি ভয়েস রেইস করা দরকার। কারণ বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় চলছে। ক্রমান্বয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটছে। তাই কর্মীদের জীবন মান ও জীবনের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন দুর্বলতা থাকলে তা অবশ্যই ভালো করে দেখতে হবে।
জেডএ/এনএইচবি/