বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে লোডশেডিংয়ে গেছে সরকার!
দাম বৃদ্ধির হাত থেকে স্বস্তি দিতে লোডশেডিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। না হলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতো ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের এই সময়ে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের উপর চাপ দিতে চায়নি সরকার। এ কারণেই বিকল্প হিসেবে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্তে যায় এবং সেটি ইতিমধ্যে কার্যকর করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে জ্বালানি তেলের বাজার। গত কয়েক মাসে প্রতিনিয়ত বিশ্বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। যা এখন আকাশ ছোঁয়া।
বাংলাদেশে চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ জ্বালানিই আমদানি করতে হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বর্ধিত দামে জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত পড়ছে। বর্ধিত মূল্যে জ্বালানি আমদানি করার কারণে ভর্তুকিও বেড়ে গেছে। এই মুহূর্ত বিশাল এই ভর্তুকির চাপ নিতে পারছে না সরকার।
এই অবস্থায় সরকার জ্বালানি খাতে আর ভর্তুকি দিতেও চাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহর করতে হলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্পও নেই সরকারের সামনে। কিন্তু দাম বাড়ালে মানুষের কষ্ট বাড়বে। তাই সরকার দাম বাড়ানোর পথে অগ্রসর না হয়ে বিদ্যুৎসাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসেঙ্গ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, যে দামে গ্যাস কিনছি সেই দামে বিক্রি করলে কারও পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে লোডশেডিং ও রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করেই সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু এলএনজি আমদানি করতে গিয়েই সরকারকে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় কাতার ও ওমানের সঙ্গে করা চুক্তির বাইরেও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনে বাংলাদেশ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই সরকারের দেওয়া ভর্তুকিও বেড়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে নসরুল হামিদ সোমবার (১৮ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, এত ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। তাই স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করতে হবে।
জানা যায়, স্পট মার্কেট ও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে ৫৯ টাকা। এই গ্যাস আমাদের গ্যাসের সঙ্গে মিক্সড করলে দাম পড়ে ২৮ টাকা। কিন্তু সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট গ্যাস দেয় মাত্র ৫ টাকা করে।
গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ৫ ডলারের এলএনজির দাম এখন ৪১ ডলার। ৭১ ডলারের ডিজেলের দাম ১৭৭ ডলার। দাম আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলছেন, বেশি দামে জ্বালানি কিনে ভর্তুকি দেওয়ারও তো একটা সীমা থাকে। এই সীমা অতিক্রম করে গেছে। গত ৪/৫ মাস ধরে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে অনেক ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে সরকার।
তিনি বলছেন, সেক্ষেত্রে সরকারের সামনে দুটি বিকল্পই আছে। বিদ্যুতের দাম ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ানো অথবা লোডশেডিংসহ নানা উপায়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার দ্বিতীয় বিকল্পকে বেছে নিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে আপাতত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।
এনএইচবি/এমএমএ/