কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছনা
বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি ২৪ বিশিষ্ট নাগরিকের
রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষকে সংসদ সদস্য কর্তৃক মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ২৪ নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ ঘটনায় যুক্ত সবাকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষকে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কর্তৃক মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, লাঞ্ছনা, অবমাননার ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। ক্ষেত্রবিশেষে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে শিক্ষকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে একজন সাংসদ একজন সম্মানিত শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন। নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রশাসনের উপস্থিতিতে গলায় জুতার মালা পরিয়ে সমগ্র শিক্ষক সমাজ, শিক্ষা ও সভ্যতাকে লাঞ্ছিত করেছে। আশুলিয়ায় প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে বখাটে ছাত্র কলেজ চলাকালীন পিটিয়ে হত্যা করে শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে। ধর্মীয় উসকানি ছড়িয়ে মুন্সীগঞ্জে স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা এবং কিছুদিন আগে ঢাকায় অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর ওপর মৌলবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গত ৭ জুলাই রাজশাহীতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে ডেকে একজন কলেজ শিক্ষককে নির্মমভাবে পেটানোর যে বর্ণনা আমরা গণমাধ্যমে পেয়েছি, তাতে আমরা বিস্মিত, স্তম্ভিত ও উদ্বিগ্ন। একজন আইন প্রণেতা আইন লঙ্ঘন করতে পারেন না। একজন সংসদ সদস্যের কলেজ শিক্ষককে এভাবে পেটানোর ঘটনা ন্যাক্কারজনক। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সমাজের সম্মানজনক পেশা শিক্ষকতায় নিয়োজিতদের সম্পর্কে যে ঘৃণ্য অবমাননাকর মনোভাব প্রকাশ করেছেন, তাতে তিনি সংসদ সদস্যেরও শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে আমরা মনে করি।
বিবৃতিতে তারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। প্রথমত, শিক্ষক মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে; দ্বিতীয়ত, শিক্ষক প্রহারের ঘটনায় স্পিকারের রুলিং প্রদানসহ সংসদ সদস্য ওমর ফারুককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে এবং তৃতীয়ত, স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণ অনুসন্ধানসহ ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করতে হবে।
বিবৃতি স্বাক্ষরদাতারা হলেন-সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্ববাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস.এম.এ সবুর, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ,বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টর আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত,বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী অলক দাস গুপ্ত,বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা এবং সংস্কৃতি মঞ্চের আহ্বায়ক সেলিম রেজা।
এনএইচবি/এমএমএ/