৬ মাসে দেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৩৩ জন
গত ৬ মাসে দেশের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৩৩ জন শ্রমিক। ২০২১ সালে একই সময়ে সারাদেশে ২২০টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মারা যান ৩০৬ জন শ্রমিক।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের উপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা (এসআরএস)।
এসআরএস বলছে, গত ৬ মাসে (১ জানুয়ারী থেকে ৩০ জুন) সীতাকুণ্ড দুর্ঘটনায় নিহত ৪৯ জনসহ সারাদেশে ২৪১টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৩৩৩ জন শ্রমিক মারা যান।
মোট ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। যেসকল শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাহিরে অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় অথবা অন্য কোন কারণে মারা গিয়েছেন তাদের এই জরিপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
জরিপে প্রাপ্ত কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে যাদের সংখ্যা মোট ১৩৮ জন। এর পরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ১০০ জন। নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছে ৪৮ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ২৬ জন এবং কৃষি খাতে ২১ জন।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে এসআরএস বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৩ জন, আগুনে পুড়ে ৫৭ জন; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২৫ জন; ছাদ, শক্ত বা ভারী কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২৩ জন; মাঁচা বা উপর থেকে পড়ে মারা গেছে ১৯ জন; বজ্রপাতে ১৫ জন; বয়লার বিস্ফোরণে ১৫ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৯ জন; পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ৯ জন। এ ছাড়া পানিতে ডুবে ৮ জন শ্রমিক নিহত হয়।
জরিপ তথ্য প্রকাশ করে এসআরএস এর নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মৃত্যু কাম্য নয়। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু চালক ও হেলপার মৃত্যুর ঘটনাগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। তিনি বলেন পরিবহন খাতকে নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপোরোয়া যান চলাচল ও অদক্ষ চালক ইত্যাদি হল পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ। সাম্প্রতিকালে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতের পরিমান বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এসআরএস জানিয়েছে, কারখানায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা, ক্যামিকেল সংরক্ষণে অদক্ষতা ও অবহেলা, কারখানায় ভবনে জরুরি বহির্গমন পথ না থাকা, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেওয়া, সেইফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া। কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়া এবং পাশাপাশি ভেজা হাতে মটর চালু করা, মাথার উপরে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লোহার রড উঠানোকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। তা ছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার কারণেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে।
এনএইচবি/এমএমএ/