সড়ক দুর্ঘটনা/ মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ২০.৬৭ জন নিহত
সড়ক দুর্ঘটনায় গত মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ২০.৬৭ জন নিহত হয়েছে। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে যা ছিলো ১৮ জনে। এই হিসাবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ১৪.১৯ শতাংশ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। যা সোমবার (৬ জুন) প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৮ টি। নিহত ৬৪১ জন এবং আহত ১৩৬৪ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৪, শিশু ৯৭। ২৪৭ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৭৯ জন, যা মোট নিহতের ৪৩.৫২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৬.৭৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৯ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮.৫৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯১ জন, অর্থাৎ ১৪.১৯ শতাংশ।
এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২৭৯ জন (৪৩.৫২%), বাস যাত্রী ৫৭ জন (৮.৮৯%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-ক্রেনগাড়ি আরোহী ৩৯ জন (৬.০৮%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশ জীপ যাত্রী ২৩ জন (৩.৫৮%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-লেগুনা) ৯৪ জন (১৪.৬৬%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-মাহিন্দ্র-টমটম)১৩ জন (২.০২%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১৭ জন (২.৬৫%) নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৭টি (৪১.০৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯১টি (৩৬.১৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৪টি (১৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৪৬টি (৮.৭১%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাসমূহের ১১১টি (২১.০২%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৪টি (৪০.৫৩%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৩টি (২৩.২৯%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৬১টি (১১.৫৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৩.৫৯%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২২.৯৭%, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-তেলবাহী ট্যাঙ্কার ২.৯৫%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ-পুলিশ পিকআপ ৪.৫৯%, যাত্রীবাহী বাস ১৫.৯৭%, মোটরসাইকেল ২৯.২১%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-লেগুনা-টেম্পু) ১৫.৭৫%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন-(নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম) ৩.৬১%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ৩.৮২% এবং অন্যান্য (পাওয়ারটিলার-ধানমাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ডাম্পার-ক্রেনগাড়ি-ট্রেন) ০.৯৮%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৯১৪ টি। (ট্রাক ১৫২, বাস ১৪৬, কাভার্ডভ্যান ১৯, পিকআপ ৩৯, ট্রলি ৮, লরি ৪, ট্রাক্টর ১৪, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ১, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ১৮, প্রাইভেটকার ১৩, অ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ৬, পুলিশ পিকআপ ১, মোটরসাইকেল ২৬৭, থ্রি-হুইলার ১৪৪ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-টেগুনা-টেম্পু) স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ৩৫ টি এবং অন্যান্য ৯ টি (পাওয়ারটিলার-ধানমাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি-ডাম্পার-ক্রেনগাড়ি-ট্রেন)।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.৩০%, সকালে ২৯.৩৫%, দুপুরে ২২.৫৩%, বিকালে ১৭.৮০%, সন্ধ্যায় ১১.১৭% এবং রাতে ১৩.৮২%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪.০৫%, প্রাণহানি ২৪.৮০%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.০৯%, প্রাণহানি ১৮.০৯%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২১.৭৮%, প্রাণহানি ২০.১২%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৫%, প্রাণহানি ১১.৭০%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৯৫%, প্রাণহানি ৮.৭৩%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.১৬%, প্রাণহানি ৩.৫৮%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৫৭%, প্রাণহানি ৭.৮০% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৮৭%, প্রাণহানি ৫.১৪% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, ১২৭ টি দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২২ টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩২ টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায়। ৩ টি দুর্ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকায় ২৩ টি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৫ জন, বিমান বাহিনীর সদস্য ১ জন, নৌ-বাহিনীর সদস্য ১ জন, সাবেক সেনা সদস্য ১ জন, সাবেক বিডিআর সদস্য ১ জন, আনসার সদস্য ২ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ২৩ জন, চিকিৎসক ৪ জন, সাংবাদিক ৬ জন, আইনজীবী ৪ জন, প্রকৌশলী ৩ জন, স্থানীয় পর্যটক ৩ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ১২ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৭ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৯ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩৭ জন, পোশাক শ্রমিক ৯ জন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী ২ জন, রং মিস্ত্রি ২ জন, ধানকাটা শ্রমিক ১৩ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৬ জন এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৮৯ জন, অর্থাৎ ৭৬.২৮ শতাংশ।