দিনভর যানজটে ঢাকা
সকাল ৮টা থেকে পোশাককর্মীরা বেগম রোকেয়া সরণিসহ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্ত্বর ও ১৪ নম্বর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। আরেকটি গ্রুপ জড়ো হয় মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায়। এ কারণে বন্ধ থাকে যান চলাচল। আর এর প্রভাবে যানজটের সৃষ্টি হয় ।
রবিবার ছিল প্রথম হজ ফ্লাইট। কিন্তু বাড্ডা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সকাল থেকেই ছিল দীর্ঘ যানজট। এতে বিপাকে পড়েন হজযাত্রীরা। এছাড়া আগারগাঁও, সাতরাস্তা, হাতিরঝিল, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, আজিমপুর, শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্টের মোড়, মালিবাগ, শান্তিনগর, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, উত্তর, বাড্ডা, কুড়িল মহাখালী, কাওরান বাজার, বাংলা মটর ও তেজগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা গেছে। যদিও প্রায় প্রতিদিন যানজটের যন্ত্রণায় ভুগছে রাজধানীবাসী। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই।
বিমান বন্দরে কথা হয় মটর সাইকেল চালক মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, একদিকে মেট্রোরেলের কাজ চলছে অন্যদিকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলণের কারণে এই গরমে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি।
বনানী মোড়ে কথা হয় মিরপুরের যাত্রী নয়নের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে, রাজধানীতে যানজটের পরিমাণ ততই বাড়ছে। একদিকে গরম অন্যদিকে রাস্তায় বের হলে শব্দ দূষণ আর যানজটের শিকার হতে হচ্ছে। বাড্ডা লিংক রোডে বাসের যাত্রী লাবলি আক্তার বলেন, বাড্ডায় অনেক রাস্তার কাজ চলছে। একারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে।
আজিমপুর মোড়ে লেগুনা চালক রহিম বলেন, প্রায় ৩ মাস ধরে আজিমপুরের রাস্তা খুড়াখুড়ি করে রাখা হয়েছে। যার কারণে এই রাস্তায় সব সময় যানজট লেগেই আছে।
এ বিষয়ে কথা হয় আজিমপুরের জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশন এই রাস্তার কাজ করেনি। এটা ওয়াসার লোক করছে এজন্য মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ওয়াসা কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখে। তিনি বলেন, এই রাস্তার জন্য আমাদের এলাকার মানুষের সমস্যা হচ্ছে আপনারা ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
দেখা গেছে, রাজধানীতে আজ ভয়ংকর যানজট। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করলেও কোনো ভাবে যানজট কমছে না।
ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ বলছে, যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি। কিন্তু সকাল থেকে মিরপুরের রাস্তা বন্ধ রয়েছে। মিরপুরের প্রায় সকল রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। পুলিশ বলছে, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকার কারণে রাস্তায় অতিরিক্ত যানজট তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারপোর্টে ডিউটির ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট অপু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আব্দুল্লাহপুর থেকে কুড়িল পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলছে। তাছাড়া মিরপুর ও কালশীর রাস্তা একবারে বন্ধ বললেই চলে।
শাহবাগে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. ইমাম হোসেন বলেন, ‘শাহবাগে বেশি যানজট হওয়ার কারণ হলো মেট্রোরেলের কারণে রাস্তাটি একেবারে ছোট হয়ে আছে। রাস্তায় গাড়ি ধরে কম এজন্য যানজট বেশি থাকে।’
পলাশী মোড়ে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট রাজু আহমেদ বলেন, ‘সকাল দশটার পর রাজধানীতে যানজট বেড়ে যায়। কারণ নিউ মার্কেটে বেশি গাড়ির চাপ থাকে, আবার রাস্তার লেন ধরে ঠিক মতো চলে না, এজন্য বেশি যানজট তৈরি হয়। তবে যানজট নিরসনে আমরা সবসময় কাজ করছি।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. স. ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, বেতন বাড়ানোর দাবিতে মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকার কচুক্ষেতে আন্দোলন করছেন পোশাক শ্রমিকেরা। যার কারণে যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেই বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে মিরপুর বিভাগের পুলিশ।
যানজটের সার্বিক বিষয় ও সাধারণ মানুষের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) হাফিজ আল আসাদ বলেন, সাধারণ ভাবে রাজধানীর কােনো একটা এলাকা যদি বন্ধ থাকে তাহেলে সারা ঢাকাতে যানজট তৈরি হয়। যে কারণে চলাচলরত মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। তাছাড়া মিরপুরে পোশাক শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছে তাদের রাস্তা থেকে সরাতে কাজ করছে পুলিশ।
কেএম