প্রকৃতিভিত্তিক নীতি বাস্তবায়নের আহ্বান

পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান নীতি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (৫ জুন) গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ মেলা ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা ও ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২-এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অনলি ওয়ান আর্থ: লিভিং সাস্টেইনেবিলি ইন হারমনি উইথ নেচার’ অর্থাৎ ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন।’
আর জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।
পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তার সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। যার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে ২২ দশমিক ৫০ ভাগ বনায়ন বেড়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেই। প্রত্যেকটা উন্নয়ন প্রকল্পে কিন্তু একটা শর্ত থাকে যে কোথাও যদি বৃক্ষ নিধন হয়, তার থেকে ৫ গুণ বেশি বৃক্ষ পরে লাগাতে হবে। সেটা কিন্তু মানা হয় না। আমাদের উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের মানুষ যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, তারা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে, তাদের জীবনমান যাতে উন্নত হয় সেটাও আমাদের করতে হবে।
আসলে বাংলাদেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় অত্যন্ত ছোট, জনসংখ্যার দিক থেকে বিশেষ বড়। সেখানে মানুষের আবাসনের ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নের ব্যবস্থা, এগুলো তো আমাদের করতেই হবে। কিন্তু প্রত্যেকটা প্রকল্পের সঙ্গে এটা নিশ্চিত থাকে যদি গাছ কাটতে হয় তাহলে সমপরিমাণ বা তার অধিক গাছ লাগাতে হবে বা সেই জায়গার পরিবেশ যাতে রক্ষা হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেইভাবেই আমরা পরিকল্পনা করি।
পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন করা না হলে সেটি কখনও টেকসই হয় না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ইতোমধ্যে ন্যাচার বেজড সলূশনের দিকে ধাবিত হতে হবে। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান নীতি মেনে চলা একান্ত দরকার।
পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবল ২৬৫ থেকে ১ হাজার ১৩৩ উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে ৫০টি জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকি জেলাগুলোতে অফিস স্থাপন কর্মকাণ্ড চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কথা আসছে। সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখে না বা আমরা কোনো ক্ষতি সাধন করি না।কিন্তু বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলো নিজেদের উন্নয়ন তারা করে ফেলেছে। তারাই বিশ্বে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে। আমরা বাংলাদেশ সব সময় এব্যাপারে সচেতন এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। কাজেই এখানে বনায়ন সংরক্ষণ একটা কঠিন কাজ। আপনারা জানেন যে আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি উখিয়ায়। আমার ছোট বেলায় দেখা এ উখিয়া ছিল যেখানে বাঘের ডাকও শোনা যেত। হাতির পায়ের ছাপ দেখা যেত। কিন্তু এখন আর সেই বনের কোনো অস্তিত্ব নেই। আর যেটুকু ছিল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে পরিবেশটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এটা বাস্তব।
বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও কিন্তু মুক্তি পাবে, লবণাক্ততা থেকেও মুক্তি পাবে এবং আমাদের মৎস্য সম্পদ বা জলজ সম্পদ সেটাও বাড়বে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক।
করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এরপর এসেছে আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যগুলো কেনা কষ্টকর হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জমি উর্বর, আমাদের জমি আছে। আমাদের নিজের ফসল ফলাতে হবে। আমাদের নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে হবে। এতে আমাদের প্রকৃতি পরিবেশও রক্ষা পাবে। পাশাপাশি আমরা পরনির্ভরশীলতাও কাটিয়ে উঠতে পারব। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এসএন
