কৌশলগত কারণে খাদ্যের দাম বাড়ছে: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
কৌশলগত সমস্যার কারণে প্রাণিখাদ্য অন্যান্য খাদ্যের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত সরকার সম্প্রসারণ করে রেখেছে। যারা প্রাণিখাদ্য ও মাছের খাদ্য উৎপাদন করতে চান, তাদের কর রেয়াতসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকার দিতে চায়। কিছু কৌশলগত সমস্যার কারণে প্রাণিখাদ্য ও অন্যান্য খাদ্যের দাম বাড়ছে। কিছু মজুতদার ও মুনাফালোভী খারাপ লোক আছে, তারা নিজেরা অনেক কিছু গোপন করে, আটকে রেখে বাইরে ছাড়ছেন কম। প্রাণিখাদ্য তৈরিতে বাইরে থেকে যে উপাদান আনতে হয় তা অতিরিক্ত নিয়েও অনেকে সেটা গুদামজাত করে রেখে কৃত্রিম সংকট দেখান।’
বুধবার (১ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২২ উদযাপন ও ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারিনি, কিন্তু মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। অনেক শিক্ষিত মানুষ এখন প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ করছে। তারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করছে। বেসরকারি খাত ছাড়া প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন সম্ভব হতো না। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন, বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট ক্রিশ্চিয়ান বার্জার। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন এর ওপর উপস্থাপন করেন প্রকল্পর চীফ টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী। এ ছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং ডেইরি খাতের উদ্যোক্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু বিদেশ থেকে গবাদিপশু এনেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরে পিতার অসমাপ্ত কাজ সফল করার জন্য বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ খাতকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ এবং যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা দিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি।
তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা দূর করার জন্য আমরা অনেক কৌশলগত অবস্থান নিয়েছি। একসময় ভারত ও মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু আসত। এ খাতের খামারি ও উৎপাদকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এখন আমরা বিদেশ থেকে কোনোভাবেই পশু দেশে আসতে দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত সরকার সম্প্রসারণ করে রেখেছে। যারা প্রাণিখাদ্য ও মাছের খাদ্য উৎপাদন করতে চান, তাদের কর রেয়াতসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকার দিতে চায়। কিছু কৌশলগত সমস্যার কারণে প্রাণিখাদ্য ও অন্যান্য খাদ্যের দাম বাড়ছে। কিছু মজুতদার ও মুনাফালোভী খারাপ লোক আছে, তারা নিজেরা অনেক কিছু গোপন করে, আটকে রেখে বাইরে ছাড়ছেন কম। প্রাণিখাদ্য তৈরিতে বাইরে থেকে যে উপাদান আনতে হয় তা অতিরিক্ত নিয়েও অনেকে সেটা গুদামজাত করে রেখে কৃত্রিম সংকট দেখান।
মেধাবী জাতি বিনির্মাণে দুধের চেয়ে ভালো খাবার হয় না উল্লেখ করে এ সময় মন্ত্রী বলেন, দেশে দুধের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অত্যন্ত চমৎকার। সরকার মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্য দুধ উৎপাদনে পশুকে দেওয়া খাবারের মান বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্ধারণ করতে হবে। শুধু লিটারের পর লিটার দুধ বাড়লেই আমরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারব না। গুণগতমানের দুধ না হলে দুধ থেকে উৎপাদিত খাবারের পুষ্টিমান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ডেইরি আইকন পুরস্কারপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাচ্ছেন। এটি সম্মানের বিষয়। এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বড় পরিসরে করা হবে। ডেইরি খাতে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আমরা উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, দেশে গুঁড়ো দুধ আমদানি হয়। আমরা বিদেশ থেকে গুঁড়োদুধ আনতে চাইনা। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসুন। দেশে প্রয়োজনে গুঁড়োদুধ তৈরির শিল্প প্রতিষ্ঠায় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। পাশাপাশি দুধের বহুজাতিক ব্যবহার করতে হবে। দুধ থেকে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে এ খাতকে সমৃদ্ধ করতে হবে। পরে মন্ত্রী ডেইরি আইকন ২০২১ পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারি ও উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য ‘পরিবেশ, পুষ্টি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নে টেকসই ডেইরি খাত’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ডেইরি খামারি ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো চারটি ক্যাটাগরিতে ডেইরি আইকন পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। দুগ্ধ খাতে দেশের সফল খামারি ও উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৩৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ডেইরি আইকন ২০২১ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে ।
ডেইরি খামার, পশুখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, দুধ ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিটি পুরস্কারের আর্থিক মূল্য এক লক্ষ টাকা। সেই সাথে প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে ক্রেস্ট ও সনদ, যোগ করেন তিনি।
এসএম/এমএমএ/