জুম বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ২৮ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ
জুম বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ২৮ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগবান্দরবানের লামা উপজেলার আদিবাসীদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ২৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানি গত ২৭ এপ্রিল আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ধান, আম, কলা, আনারসসহ পুরো বাগান পুড়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লি. স্থানীয় ভুমিদস্যুদের সহায়তায় বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কারবারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়ার আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক।
‘সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার' নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। অন্য কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও ভূ-সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। বাগান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোর শিগগিরই খাদ্য সংকটে পরার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের আশ্বস্থও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।
বিবৃতিদাতা বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, এমতাবস্থায় আমরা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানী কতৃক গত ২৭ এপ্রিল আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার, ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্র যৌথ বিবৃতি প্রদান করছি।
বিবৃতিদাতারা হলেন, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাশেদা কে. চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস. এম. এ সবুর, উন্নয়ন কর্মী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি, অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, জাতীয় শ্রমিক জোট কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতি কর্মী ড. সেলু বাসিত, সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভতী ভূষণ মাহাতো, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম শীল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী দনওয়াই ম্রো।
এনএইচবি/এএস