জিয়াউর রহমান জামায়াতকে রাজনীতির সুযোগ করে দেয়: প্রধানমন্ত্রী
জিয়াউর রহমান মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংবিধান বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর যখন তার রাজনীতি করার খায়েশ হয়, তখন সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ যেখানে জামায়াতে ইসলামসহ সব দলের রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না, সেটি বিলুপ্ত করে দিয়ে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে যুদ্ধাপরাধীদের ভোটের অধিকার ছিল না। যাদের বিচার জাতির পিতার শুরু করেছিলেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে। তাদের মুক্তি দিয়ে সেই বিচারে হাত থেকে তাদের রক্ষা করে জিয়াউর রহমান। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন মেধাবী ছাত্রনেতাকে খুন করে সেই সাজাপ্রাপ্ত খুনিকেও জিয়াউর রহমান মুক্তি দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যত যুদ্ধপরাধী, রাজাকার মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী তাদেরই ক্ষমতায় বসিয়ে ছিল জিয়াউর রহমান।’
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর আর কেউ এদেশের দুঃখী মানুষের দিকে তাকায়নি। আর তাকাবে কারা? যারা সংবিধান লংঘন করে, সেনা আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা শুরু করেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে। তারা এদেশের মানুষের ভাগ্য তো পরিবর্তন করতে আসেনি, নিজেদের ভাগ্য গড়তে এসেছিল। তারা খুনীদেরকে রক্ষা করতে এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং সপরিবারে হত্যা হলো সেই হত্যার বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ অর্থাৎ দায়মুক্তি দেয়া হয়, এখানেই থেমে থাকেনি সেই সমস্ত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে তারা চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। এটাও দেখেছি সেই সকল খুনিদের রাজনীতি করতে সুযোগ দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই খুনি পাশা, হুদা এদেরকে নিয়ে প্রথম রাজনৈতিক দল গঠন করেন ইত্তেফাকের একজন মালিক মইনুল হোসেন। এরপর জিয়াউর রহমান তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি দিয়ে পাঠায়। বহুদেশ তাদের সেসব দেশের দূতাবাসে গ্রহণ করেনি, কারণ তারা বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানের কাছে তারা অত্যন্ত আদরের ছিলেন। তাই তাদের নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছিল। সেনাবাহিনীতেও এর প্রতিবাদ হয়েছিল। সেনাবাহিনীতে ১৯টা ক্যু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের পর। ক্যু হওয়ার পর সেনাবাহিনীর বহু অফিসার, সৈনিককে জিয়াউর রহমান হত্যা করেন। আর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তো আছেই। এই খুনিদের পরবর্তীকালে জেনারেল এরশাদ যখন ক্ষমতায় এসে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। তারা একটা দল গঠন করে। খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও একধাপ উপরে যায়। খুনি কর্নেল রশিদ এবং মেজর হুদা তাদেরকে জনগণের ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদের সদস্য করে নিয়ে আসেন। কর্নেল ফারুককেও আনার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেখানে যে জেলা প্রশাসক ছিলেন তিনি তা করতে দেননি। যে কারণে ভোট চুরি করে দুই জনকে সংসদে বসান খালেদা জিয়। জিয়া ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর রাজাকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী তাদেরকে কিন্তু মন্ত্রী বানিয়েছে উপদেষ্টা বানিয়েছে। তাদেরকে ক্ষমতা নিয়ে এসেছিল। ৭৫ এরপর যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারাই ক্ষমতাসীন হয়। যার ফলে এদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটে নাই বা তারা পরিবর্তন ঘটাতেও চায়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। কিন্তু এই বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি গোলামী জিনজিরায় আবদ্ধ করতে প্রচেষ্টা চালায় তারা। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।’
এসএম/এসএ/