বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর তাগিদ দুই রাষ্ট্রপতির
ছবি : সংগৃহীত
দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্পর্ক আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
ভারতের রাষ্ট্রপতি বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে দুই রাষ্ট্রপ্রধান এই বিষয়ের ওপর জোর দেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ তাদের স্বাগত জানান। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠকে করেন দুই রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় প্রেস সচিব বলেন, দুই রাষ্ট্রপতি দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দেন। তারা এ ব্যাপারে দুই দেশেরই যৌথ উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।
সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় বছর। এই বছরে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করছি।’
ভারত বাংলাদেশের খুব কাছের এবং বিশ্বস্ত বন্ধুরাষ্ট্র উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তা আজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাণী পাঠিয়ে এবং এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সশরীরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকায় কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তিতে ‘মৈত্রী উৎসব’ পালন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণ একে অপরের ইতিহাস আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে।’
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যার সমাধান, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো, যোগাযোগ-এসব খাতে দুদেশের সম্পর্ক অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুদেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রসার ঘটেছে। দুদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
বাংলাদেশে আসতে পেরে গর্বিত জানিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক ও প্রকল্প সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দুদেশের বাণিজ্য যাতে আরও বাড়ে সে ব্যাপারেও তার দেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন পথে যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে উল্লেখ করে কোবিন্দ বলেন, এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদকে ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে অভিহিত করেন কোবিন্দ।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাস সরকারসহ দু’দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের রেপ্লিকা রাষ্ট্রপতিকে উপহার হিসেবে দেন। পরে বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইতে সই করেন রামনাথ কোবিন্দ।
পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি তার সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এবং সরকারি পদস্থ কর্মকর্তারাও নৈশভোজে অংশ নেন।
নৈশভোজের আগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগ করেন অতিথিরা।
আরইউ/এমএমএ/