বেগম পাড়া তৈরি হচ্ছে শোষণের টাকায় : জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হচ্ছে, বেগম পাড়া তৈরি হচ্ছে শোষণের টাকায়।
আজ বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলটির চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১১ দফা ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল হক। এ সময় এ কথা বলেন বিরোধী দলীয় এই উপনেতা।
জি এম কাদের বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও শোষণ ও বৈষম্যহীন দেশ পায়নি দেশের মানুষ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। অথচ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে দেশকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সংবিধানের মূল চারটি নীতির তিনটি থেকেই সরে গেছে দেশ।
বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য করেছে আমাদের সাথে। পশ্চিম পাকিস্তানের এই আচরণ মেনে নিতে পারেনি দেশের মানুষ। এর প্রতিবাদে স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে। আমরা অর্জন করেছি গৌরবোজ্জল স্বাধীনতা।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সংবিধানে চারটি মূলনীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সংবিধানের চারটি মূল নীতি থেকেও আমরা দূরে সরে গেছি।
তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই গণতন্ত্র আর নেই। আবার সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এবং দলীয়করণ করেছে। এতে সামাজিক ন্যায়-বিচার আর নেই। পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের শোষণ করত এখন আমরা শোষিত হচ্ছি দেশের মানুষের কাছে। প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হচ্ছে, বেগম পাড়া তৈরি হচ্ছে শোষণের টাকায়।
এছাড়া জাতীয়তাবাদ বা নিজস্বতাও হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে নেই কোনও উদ্যোগ। বিজাতীয় সংস্কৃতি গ্রাস করছে আমাদের স্বকীয়তাকে। শুধু ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় আছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ সকল ধর্মের অনুসারীরা স্বাধীনভাবেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারছে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে দেশকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি, দলীয়করণ আর স্বজনপ্রীতির কারণে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর বিতশ্রদ্ধ। তাই দেশের মানুষ আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চেয়ে জাতীয় পার্টি বেশি সুশাসন দিতে পারবে।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনে দেশের মানুষ বিরক্ত। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা যেভাবে শক্তি প্রদর্শন করেছে তাতে দেশের মানুষ আর সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারে না। দেশের মানুষ ভালো নেই, কাজ নেই, বেড়েছে বেকারত্ব। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে সাধারণ মানুষ, দেখার যেন কেউ নেই।
যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আব্দুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতা।
এসএম/এসআইএইচ/