ব্লিনকেন-মোমেনের বৈঠক
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় প্রাধান্য পাবে
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে সোমবার (এপ্রিল ৪) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠক। সেখানে বাংলাদেশের তরফে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রস্তাবিত দুটি সামরিক চুক্তি-আকসা ও জিসোমিয়া সই করার অগ্রগতি জানতে চাইতে পারে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিনকেনের আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রবিবার (৩ এপ্রিল মার্চ) সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসির ডুলেস বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম তাকে স্বাগত জানান।
ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এ নতুন অর্থনৈতিক বলয়ে বাংলাদেশকে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য তারা বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসন কৌশলগত স্বার্থে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে এই চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার জন্য নয়টি দেশকে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন প্রশাসন প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্র্রেলিয়ার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক বলয়ের যাত্রা শুরু করতে চাইছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশকে ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছে। এখনও চলছে ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়নের কাজ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় এমন উদ্যোগ বলে অনেকের ধারণা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির ব্যাপারে বাংলাদেশের কিছু নীতিগত অবস্থান রয়েছে। প্রথমত বাংলাদেশ কোনো দেশের বিরুদ্ধে গঠিত জোটে যোগ দেয় না। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতেও সামরিক অংশে যোগ দিতে বাংলাদেশের আপত্তি রয়েছে।
এ কারণে কোয়াডে যোগ দেবে না বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ব্যাপারে বাংলাদেশের আপত্তি নেই। ফলে নীতিগত দিক থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে যোগ দিতে বাংলাদেশের বিবেচ্য বিষয় হলো, এই বলয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের লাভ কতটা হবে।
আজকের বৈঠকে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বাংলাদেশের অভিমত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাইবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ফেমওয়ার্কের ব্যাপারে বাংলাদেশ কতিপয় বিবেচ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে।
সূত্র মতে, ফ্রেমওয়ার্কের চারটি উপাদানের মধ্যে যেগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত ওইসব উপাংশেই শুধু বাংলাদেশ যোগ দেবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ হাতিয়ার হবে না।
সূত্রটি আরও জানায়, মুক্ত বাণিজ্য চাইলেও বাংলাদেশ এই ফ্রেমওয়ার্কে মূলত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা চাইবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাজার সুবিধা আরও উন্মুক্ত করার প্রতি জোর দেবে ঢাকা।
চীনের নেতৃত্বে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামের একই ধরনের একটি উদ্যোগে বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে। বিআরআই বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে বিপুল অংকের ঋণ দিয়েছে।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর অর্থায়ন প্রয়োজন। চীন অর্থের ঝুড়ি নিয়ে হাজির। এখন আমাদের কী করা উচিত?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ইঙ্গিতই করেছেন যে, জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে পশ্চিমা অর্থ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাংলাদেশের প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদা মতো অর্থের প্রবাহ নেই।
কয়েক বছর ধরে আলাপ-আলোচনা করে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১২টি দেশ নিয়ে ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ’ (টিপিপি) সই করে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে যুক্তরাষ্ট্রবাদে অন্য দেশগুলো চুক্তি করে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারি সংলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে কিছুটা আলোকপাত হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আবারও প্রসঙ্গটি তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরফে বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের আসন্ন অর্থনৈতিক সংলাপে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। জুনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
পাশাপাশি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে আগামীতে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
অপরদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের পরপরই ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
টিটি/