মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আনসার ব্যাটালিয়ন আইনের খসড়া অনুমোদন
দুটি পৃথক আদালত গঠন এবং বিদ্রোহ ও শৃঙ্খলাভঙ্গসহ এমন অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড এবং সর্বনিন্ম পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে সরকার আনসার ব্যাটালিয়ন আইন ২০২২ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
সোমবার (২৮ মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং-এ একথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর আইন ২০২২ এর খসড়া এবং এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) আইন ২০২২ এর খসড়া নীগিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৯৫ সালের আনসার ব্যাটালিয়ন আইন ছিল। সেই আইনকে বর্তমান বাস্তবসায় অ্যামেন্ডমেন্ট করতে গিয়ে দেকা যায় অনেক পরিবর্তন করতে হচ্ছে। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি পরিবর্তন না করে নতুন আনসার ব্যাটালিয়ন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং মন্ত্রিসভা বৈঠকে উত্থাপন করেছে।
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এই আইনে ৩৩টি ধারা আছে। সরকার আনসার ব্যাটালিয়নের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ করে দিবে। ব্যাটালিয়নের কোনো সদস্য কোন রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ব্যতিত কেউ ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা সংবাদপত্রে বা অন্য কোথাও কোনো তথ্য প্রকাশ করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান,ব্যাটালিয়নের কোনো সদস্য কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের জন্য বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায়। এখানে দুটি আদালত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি হচ্ছে সংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত ও বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, পোশাক, যন্ত্রানংশ, যানবাহনের অংশ ইত্যাদি পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করার অপরাধের জন্য সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আনসার আদালত কর্তৃক সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে সমপরিমান অর্থ দন্ড দেওয়া যাবে।
অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া যাবে। এখানেও আপিলের সুযোগ থাকবে।
তিনি জানান, কেউ যদি শৃংখলা ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত থাকে, বাহিনীতে বিদ্রোহ সংগঠন বা প্ররোচনা প্রদান বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে এই জাতীয় অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড , বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা সশ্রম কারাদণ্ড বা নূন্যতম পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হবে।
এসব অপরাধের সাজা দেওয়া হবে বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালতে।
আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত যে রায় দেবে তার বিরুদ্ধে আনসার ব্যাটালিয়ন আপিল ট্রাইবুনাল থাকবে, সেখানে আপিল করা যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগের আইনে এগুলো ছিল না। এগুলো নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা অনেকটা কোর্ট মার্শাল টাইপের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদালত গঠন করে দেবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তবে স্বল্প অপরাধের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করবেন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক। সরকারের অনুমতিক্রমে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনুন্য পরিচালক মর্যাদার তিনজন কর্মকর্তার সমন্বয়েসেংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করবেন।
অপরদিকে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করবে। এটি সরকার নিজে করবে।
মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মন্ত্রিসভা দেশের ৫৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর ২০২২ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মতই একটি আইন। রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য। তিনি একজন ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেবেন চার বছর মেয়াদের জন্য। তবে এদের কেউই দুই টার্মের বেশি থাকতে পারবেন না।
আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে একটা বিশেষ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে বিজনেস ইনকিউবেটর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনবোধে আচার্য অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকদের উদ্যোক্তারূপে বিকাশ করার জন্য তাদের বাস্তবতার আলোকে কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের জন্য অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজনেস ইউকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
আরেকটা বিষয় অর্ন্তভূক্ত হয়েছে প্রোফেশনাল কোর্স চালু করার বিষয়টি। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা আছে। আমাদের এখানে এটা নেই। মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোফেশনাল কোর্স চালুর কথা বলা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর তাদের বাস্তব প্রোফেশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো বিষয় কোর্স করতে চায় তাহলে সেটা থাকবে।
এজেন্সি টু ইনোভেট
এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) আইন ২০২২ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আমাদের দেশ যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ হচ্ছে , সেজন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য এটুআই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
এই আইনে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি স্বনির্ভর পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। যার চেয়ারম্যান থাকবেন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী। এজেন্সির একজন প্রধান নির্বাহী থাকবে।
এটুআই-এর কাজ হবে ছয়টা। জনবান্ধব সেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্বাবনী সংস্কৃতির বিকাশ এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।
আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী যে কোনো কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ ।
বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রণোদনা এবং জনসচেতনতা ও চাহিদা সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান।
জনকল্যাণে প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণায় উদ্ভাবিত পণ্য ও সেবার মেধাসত্ব সংরক্ষণে সহায়তা করা।
আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার শিল্প, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাসহ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে অংশীদ্বারিত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সেবা ও পরামর্শ প্রদান। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এজেন্সিকে বৈশ্বিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
এনএইচবি/এমএমএ/