‘রাশিয়ার সহযোগিতা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে এত দ্রুত বিজয় অর্জন সম্ভব হতো না’
মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া এত দ্রুত বিজয় অর্জন সম্ভব হতো না বলে মত দিয়েছেন বক্তারা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সম্মেলনে এই মত দেন তারা।
কমিটির আয়োজনে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আলোচনার বিষয় ছিল: ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদান’।
সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমান রাশিয়ান রিপাবলিক এবং ভারতসহ বিদেশী রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের অতুলনীয় অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মাত্র নয় মাসে কখনও আমরা এই বিস্ময়কর বিজয় অর্জন করতে পারতাম না, যদি ভারতের পাশে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো পরাশক্তির কার্যকর সহযোগিতা না পেতাম। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নজিরবিহীন গণহত্যার নিন্দা করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করতে গিয়ে ভারত যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একরকম একঘরে হয়ে গিয়েছিল সেই দুঃসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকার নেত্রী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত আমাদের পাশে এসে যেভাবে দাঁড়িয়েছিল তা আমাদের অনেক বড় সহায়তা দিয়েছে। এর ফলে আমরা একটি দুর্ধর্ষ সামরিক বাহিনীকে জনযুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করেছি। সোভিয়েত, ভারত শুধু আন্তর্জাতিকভাবেই নয় বরং মানবিক মমত্ববোধের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সহায়তা করেছে। আমার মা কবি সুফিয়া কামালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে চিঠি পাঠিয়েছিল। আমাদের বাড়ির পেছনে সোভিয়েত কালচারাল সেন্টারের নবিকভ নামক কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমার মার নিরবিচ্ছিন্ন খোঁজখবর রেখেছেন। গিয়াসউদ্দিন স্যার সোভিয়েত কালচারাল সেন্টারে এসে পোশাক পরিবর্তন করে আমাদের বাসায় এসে মার সংগ্রহ করা রেশন ফেরিওয়ালার বেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। আমার আশা নতুন প্রজন্ম এসব ইতিহাস জানার চেষ্টা করবে এবং আমাদের শত্রু-মিত্রকে চিনতে পারবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নির্মূল কমিটির রাশিয়া শাখার উপদেষ্টা, রাশিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোতালিব পাটওয়ারী বাহার বলেন, ‘ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে ১৯৭১ সালে ৩ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অতঃপর রাশিয়াও বাংলাদেশ-ভারতের পাশে এসে দাঁড়ায়। রাশিয়া বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য পারমাণবিক ক্ষমতাধর সাবমেরিন বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর এবং চীন ও পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশের দিকে এগুনোর আর সাহস পায়নি। এভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর পাহারা দিয়ে বাংলাদেশকে বর্হিশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।’
নির্মূল কমিটির রাশিয়া শাখার উপদেষ্টা, রাশিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোতালিব পাটওয়ারী বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য প্রদান করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
আলোচনায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শফিকুর রহমান এমপি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর-এর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি, লেখক গবেষক মফিদুল হক, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ভূতত্ত্ববিদ মুক্তিযোদ্ধা মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, নির্মূল কমিটির রাশিয়া শাখার উপদেষ্টা, রাশিয়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ রাশিয়ার সভাপতি ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান শেখ, নির্মূল কমিটির রাশিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রাশিয়া আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীর কুমার সরকার, ঢাকার ল্যাব এইড লিমিটেড-এর কনসালটেন্ট সোনোলজিস্ট, নির্মূল কমিটির রাশিয়া শাখার সাবেক সহসভাপতি ডা. মমতাজ রহমান।
এমএ/এএন