করোনা ভীতি জয় করে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল
দীর্ঘ দুই বছর পর প্রাণ খুলে বীর শহিদদের স্মরণ করল জাতি। শনিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকেই সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ছিল মানুষের পদচারণায় মুখোর। তবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হওয়ায় ভোরে সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারেনি।
সকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ৬টা ৮ মিনিটের দিকে তারা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
এরপর সর্বসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যানারের নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
সকাল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাকের পার্টি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, জাহাঙ্গীর নগর শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধে।
অনেক সামাজিক সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা মাথা লাল সবুজের ক্যাপ পরে বুকে স্মৃতিসৌধের ব্যাজ লাগিয়ে স্মৃতিসৌধে হাজির হয়েছেন। এদিন আগত সকলের চোখে মুখে ছিল দীর্ঘ দিন করোনায় ভীত জয় করারও স্বস্তি। বিশেষ করে গত দুই বছর নানা বিধিনিষিধ থাকায় অনেকেই ইচ্ছে থাকার সত্ত্বেও স্মৃতিসৌধে যেতে পারেননি। তাই এবার যেহেতু পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়েছে সেজন্য সবার চোখে মুখে ছিল স্বস্তির ছোয়া।
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর সবার প্রতিজ্ঞা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যয়। সকল বঞ্চনা দূর করে সমতা ভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। দীর্ঘদিন পর এভাবে সকলে এক সঙ্গে স্মৃতিসৌধে আসতে পেরে খুশিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সোহেল মিয়া।
তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, গত দুই বছর ইচ্ছে থাকার সত্ত্বেও বাচ্চাদের নিয়ে আসতে পারিনি। এবার যেহেতু সব খুলে দেওয়া হয়েছে। তাই ৬ বছরের ছেলে তাফিফকে নিয়ে এসেছি। এখানে আসলে ওদের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া যায়। মানুষের এই যে ঢল, লাল সবুজের পতাকা স্মৃতিসৌধের আসার কারণগুলো বাচ্চাদের শেখানো দরকার। এজন্য আমি সুযোগ পেলেই নিয়ে আসি।
স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু তার প্রতিক্রিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে এগিয়ে নিতে সামনের বাংলাদেশ সুশাসনের বাংলাদেশ করতে হবে। সেটার জন্য কঠোরভাবে দুর্নীতির সমস্যা ও দলবাজির সমস্যা, বৈষম্য ও দারিদ্রের সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। সেই জন্য আমি মনে করি, বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সমাতান্ত্রিক অর্থনীতির পথই অনুসরণ করা দরকার। সুশাসনের পথ অনুসরণ করা দরকার।
যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, জাতির দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধপরাধীদের বিচার হচ্ছে। বিচার চলমান থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা অতিক্রম করা সম্ভব। নানা ধরনের বাধা বিপত্তি আছে। তার পরও মহৎ উদ্দেশ থাকলে সেটা অতিক্রম করতে পারে। আগেও করেছে আগামীতেও করবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যখন থাকবে, যখন মহান মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ থাকবে তখন যে কোনও বাধা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করা কঠিন কিছু হবে না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আখতারুজ্জামান বলেন, একটি দেশের যখন সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটে তখন তার ছোঁয়া সবার উপরই পড়ে। সাধারণ ও সব শ্রেণি পেশার মানুষকে মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গৃহীত হয় তখন জীবনের উপর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে সেটাই ঘটছে। তা সত্ত্বেও এখনো কিছু সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত কিছু মানুষ আছে। তাদেরকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ও উন্নয়নের সুফল পৌঁছানোর জন্য নানা উদ্যোগ অব্যাহত রাখাসহ যেগুলো জোরদারের বিকল্প নাই।
স্মৃতিসৌধে শনিবার দিনভর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আবৃত্তি, দেশের গান, বাউল গান ও চিত্রকর্মী প্রদর্শনী, অ্যাক্রিবেটিকসহ নানা আয়োজন থাকছে।
এসএম/এমএমএ/