গভীর সমুদ্রে অপহরণ, ফুটপ্রিন্ট মিললো নারায়াণগঞ্জ
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ার পর এখন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায়। এসব এলাকা থেকে দস্যুরা মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করে জেলেদের নিয়ে জিম্মি করে নিয়ে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে। আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপন। অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। এই পন্থায় মুক্তিপণের অর্থ সংগ্রহকারী এক জলদস্যুর ফুটপ্রিন্ট মিলেছে নারায়াণগঞ্জে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব সদর দপ্তর জানায়, গত নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা থেকে জেলেরা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে যায়। পরে গত ২০ নভেম্বর পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী (বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) বঙ্গোপসাগরের ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অপহরণের স্বীকার হয় তারা। জলদস্যুরা ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি নৌকায় ডাকাতি করে। অতঃপর জলদস্যুরা জেলেদের অপহরণ করে তাদের সঙ্গীদের মুক্তিপণের অর্থ জানিয়ে ফেরত পাঠায়। পরে মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে ছাড়া পান তারা।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তথ্য বলছে, মোবাইল ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থ প্রবাহের উপর গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জসহ আরো কয়েকটি স্থানে এ সংক্রান্ত ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩০ নভেম্বর রাতে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় জেলেদের নৌকায় ডাকাতির মূল মুক্তিপণ সংগ্রাহক মো. ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে (২৮) গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. ইলিয়াস হোসেন মৃধার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩ ডিসেম্বর পরবর্তীতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮ এর আভিযানে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা এলাকা থেকে জলদস্যু দলের মূল সমন্বয়কারী মো. খলিল জমাদ্দার (৫০), মো. মাহাতাব পেদা (৩৩), মো. জামাল আকন্দ (৩৬), মো. মাছুম (৪৬) এবং মো. মিনাজ খাঁ কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ওই গ্রেফতারের ওই অভিযানে জলদস্যূদের সঙ্গে ব্যাপক গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
সুন্দরবনের পর পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা দস্যুমুক্ত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে র্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার (১২ ডিসেম্বর) উপকুলীয় জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তায় আইন শৃংখলা বিষয়ক একটি বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় বরগুনার পাথরঘাটায়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন র্যাব মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন। পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালীকে নিরাপদ করতে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই উপকূলীয় অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জকে মাথায় রেখে ইতেমধ্যে র্যাব ফোর্সেস ত্রিমাত্রিক টহলের ব্যবস্থা করেছে। ভবিষ্যতে সাগরে যাতে কেউ কোন প্রকার অস্থিরতা তৈরী করতে না পারে সে ব্যাপারে র্যাব অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে র্যাব ফোর্সেস কোন ব্যক্তি বা বাহিনীকে একচুলও ছাড় দিবে না।
এনএইচ/