র্যাবের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে গঠিত এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শনিবার (২৬ মার্চ)। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান 'নিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থায়'।
এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৮ মার্চ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এ বাহিনী ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর দিনটিকে ‘রাইজিং ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে বিশেষ এ বাহিনী।
বর্তমানে বাহিনীর মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
প্রতিষ্ঠার পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও স্ব স্ব এলাকায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে র্যাব। প্রায় তিন সপ্তাহ পর ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) রমনা বটমূলে নিরাপত্তা দিয়ে র্যাব তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একই বছরের ২১ জুন পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করে বাহিনীটি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। বর্তমানে সারা দেশে এ এলিট ফোর্সের ব্যাটালিয়ন সংখ্যা ১৫টি। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জীবনবাজি রেখে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে সংস্থাটি।
র্যাব দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ টানা ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আমির শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেটের শাপলাবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রতিষ্ঠার পর এটিই ছিল র্যাবের সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ও সবচেয়ে বড় সাফল্য।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার পরপরই মাঠে নামেন র্যাব গোয়েন্দারা। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ শত শত জঙ্গিকে।
এছাড়া রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজনে জঙ্গি হামলার পর র্যাব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ৩ শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এর মধ্যে গত ১৬ জুলাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র আধ্যাত্মিক নেতা মাহমুদ হাসান গুনবিকে রাজধানী ঢাকার শাহ আলী থানাধীন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া ৪ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে ময়মনসিংহের কোতয়ালীর খাগডহর এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে জেএমবির ৪ সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার হয়। এর পাঁচদিন পর (৯ সেপ্টেম্বর) বিভক্ত জেএমবির একটি গ্রুপের কর্ণধার জঙ্গি নেতা এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে বাহিনীটি। এছাড়া বিশেষ দিনগুলোতেও তাদের নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।
সম্প্রতি ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, সেখানে গুরুতর দগ্ধদের র্যাবের হেলিকপ্টারে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাবের কাছে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ জন অপরাধী আত্মসমর্পণ করে। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র্যাব নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো অভিযানে বড়বড় রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনে বাহিনীটি। যাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মাদক, অস্ত্র ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।
'রিপোর্ট টু র্যাব' মোবাইল অ্যাপস সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী তথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধ, নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য, খুন, অপহরণ, মাদক, ডাকাতির বিষয়ে যে কেউ সহজে জানাতে পারে।
জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা বন্ধুর মতো সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য এ দেশকে জঙ্গিমুক্ত করা। সেই সঙ্গে দেশ থেকে মাদক, অস্ত্রকারবারি ও সন্ত্রাস মুক্ত করা। এ উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা দায়িত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের বেশকিছু ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে। যার মধ্যে একটি দস্যুমুক্ত সুন্দরবন।
তিনি বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক সমস্যা পেরিয়ে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে অকুতোভয় র্যাব ফোর্সেস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশপ্রেমে বলিয়ান হয়ে পেশাদারিত্ব, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সাধারণ জনগণের আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এ ফোর্স।
কেএম/কেএফ/