আদিবাসীদের ভূমি দখলে ২৪ বিশিষ্ট নাগরিকের উদ্বেগ
আদিবাসীদের জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, রবিবিার (২০ মার্চ) সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে দখল হয়ে যাওয়া জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারী পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ার বাসিন্দারা।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক কামাল উদ্দিন কয়েকজন স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সহায়তায় আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করেন বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।
সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক ।
‘সর্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার’ নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। আরেক কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারী পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ার আদিবাসীদের জুমের বাগান এবং ভূমি দখল হয়ে যাওয়া ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। স্থানীয় ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের সহায়তার বিষয়ে কোনো প্রকার আশ্বস্তও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।
এমতাবস্থায় আমরা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের আদিবাসীদের দখল হয়ে যাওয়া জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, ভূমিদূস্যদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া এবং পাড়া গুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন-ঐক্য ন্যাপের সভাপতি, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সভাপতি মন্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস.এম.এ সবুর মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম.এম. আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী,ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সিনেট সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম,জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি, আবদুল ওয়াহেদ, গণজাগরণমঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতিকর্মি ড. সেলু বাসিত, সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া,সংস্কৃতিকর্মী এ কে আজাদ, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা,জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভতী ভূষণ মাহাতো,বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম শীল।
এনএইচবি/এমএমএ/