শাহবাগে প্রতিবন্ধী শিক্ষক সমিতির আন্দোলন অব্যাহত
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) শাহবাগে তারা পঞ্চম দিনের মতো এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে ২০০৯ সালে বিশেষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সরকার। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দেশে ১ হাজার ৭২৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এক মাসের মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেননি।
তাই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবি, শিক্ষকদের বেতন ভাতা, ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিতরণ, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রতিবন্ধী স্কুলের নিয়মিত মনিটরিং, প্রতিবন্ধীবান্ধব ভবন নির্মাণসহ ১১ দফা দাবিতে তারা গত ২০ মার্চ থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
শিক্ষকদের মূল দাবি, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি করা। এ ছাড়া তারা আরও ১০টি দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষক আরিফুল রহমান অপু বলেন, এ আন্দোলন থেকে আমাদের অনেক শিক্ষক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকে আন্দোলন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু কেউ এখনো আন্দোলনের মাঠ ছাড়েননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে জানান এ শিক্ষক।
ইসরাত জাহান নামে আরেক শিক্ষক বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছে এবং দাবি আদায় না হলে এ আন্দোলন চলবে।
শিক্ষক চাপা খন্দকার বলেন, দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাব না।
সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিবন্ধী শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক রিমা খাতুন বলেন, আমরা আমাদের অধিকার চাই। খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছাড়াই মাঠ ছাড়ব না।
আন্দোলনরত শিক্ষক মাসুদ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা আশাবাদী তিনি অবশ্যই আমাদের দাবি মেনে নেবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখব।
প্রতিবন্ধী শিক্ষক সমিতির পটুয়াখালী জেলার যুগ্ন আহ্বায়ক সোহেল খান বলেন, দাবি আদায়ের আন্দোলন চলছে চলবে। আমাদের এখানে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক আন্দোলন করছেন।
প্রতিবন্ধী শিক্ষক সমিতির টাঙ্গাইল জেলার সদস্য সচিব বাবুল খান বলেন, আজ পাঁচদিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব ইশরাত জাহান বলেছেন, আমরা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মৌখিক কথায় এক মাসের মধ্যে সুরাহার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তিনি সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেননি। তাই আবার রাজপথে অবস্থান নিলাম। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনের মিডিয়া সমন্বয়ক পার্থ ঘোষ জানান, আমরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। বউ-বাচ্চাকে ঠিক মতো খাবার দিতে পারি না। ভালো একটা জামা-কাপড় দিতে পারি না। স্কুল এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে আমরা অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-
১) প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমম্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়সমূহের একসঙ্গে স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করা।
২) বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়োগের তারিখ হতে বেতন ভাতা প্রদান।
৩) সব বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান।
৪) সব বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ নিশ্চিত করা।
৫) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করা।
৬) সব বিদ্যালয়ে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ শতভাগ নিশ্চিত করণ।
৭) প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহ নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করণ।
৮) শিক্ষক-কর্মচারীদের মান উন্নয়নমূলক ট্রেনিংসহ সংশ্লিষ্ট সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।
৯) শতভাগ বিদ্যালয় আধুনিক মানসম্পন্ন, প্রতিবন্ধীবান্ধব ভবন নির্মাণ নিশ্চিতকরণ।
১০) প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহে আধুনিক থেরাপি সরঞ্জাম সরবরাহসহ থেরাপি সেন্টার চালুকরণ।
১১) ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা জীবন শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানসহ আত্মনির্ভরশীল জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেওয়া।
কেএম/এসএন