কৃষিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে: খাদ্যমন্ত্রী
দেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে সরকার বদ্ধ পরিকর। ইতিমধ্যে পুষ্টি পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বুধবার (২৩ মার্চ) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে জাতিসংঘের এফএও-এর খসড়া তৃতীয় দেশ বিনিয়োগ পরিকল্পনা (সিআইপি৩) ও মিটিং দ্য আন্ডারনিউট্রিশন প্রকল্পের ফলাফল প্রকাশ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাধন চন্দ্র বলেন, কৃষিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও জলবায়ু স্মার্ট বিনিয়োগ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এসময় তিনি তৃতীয় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাজমানারা খানুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন, শেরেবাংলা কৃষি বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শহিদুর রশিদ ভূঁইয়া।
কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, একাডেমিয়া ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কর্মশালায় বাংলাদেশ তৃতীয় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা- টেকসই, পুষ্টি সংবেদনশীল ও স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা (সিআইপি ৩, ২০২১-২০২৫) খসড়া সংস্করণ উন্মোচন করা হয়। খসড়াটি জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি (এনএফএনএসপি) ২০২০-এর কর্ম পরিকল্পনার (২০২০-২০৩০) উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যা পরবর্তীকালে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি ২০২০-এর আগামী দশ-বার্ষিক ( ২০২১-২০৩০) কর্মপরিকল্পনা ও এ সংক্রান্ত নীতিসমূহের বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হয়।
চূড়ান্ত পর্যায়ে সিএইপি ৩, জাতীয় নীতিগত কাঠামো, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আঞ্চলিক, স্থানীয় ও সেক্টরাল বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও প্রোগ্রামগুলোর অগ্রগতি নির্দেশনা এবং তা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে।
অন্যদিকে, একইসঙ্গে 'জাতীয় খাদ্যভিত্তিক খাদ্যগ্রহণ নির্দেশিকা ২০২০' - এর মোড়ক উন্মোচনের সঙ্গে নিউট্রিশন চ্যালেঞ্জ ব্যাজ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মটি উদ্বোধন করা হয়। 'জাতীয় খাদ্যভিত্তিক খাদ্যগ্রহণ নির্দেশিকা ২০২০’ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, খাদ্য সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং পুষ্টি সচেতনতা উন্নত করতে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে।
জাতীয় খাদ্যগ্রহণ নির্দেশিকা ২০১৫ সংশোধন করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশমালার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে এএফএও ও এফপিএমইউ যৌথভাবে খাদ্যভিত্তিক নির্দেশিকাগুলো তৈরি করে।
নিউট্রিশন চ্যালেঞ্জ ব্যাজ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মটি এফপিএমইউ-এর ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে। শিশু, কিশোর ও যুবকদের উদ্দেশ্যে, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় তৈরি শিক্ষণীয় এ প্ল্যাটফর্মটি মূলত একটি পাঁচ-মডিউল ভিত্তিক পুষ্টিবষয়ক নির্দেশনামূলক সার্টিফিকেট কোর্স। অন্যরাও কোর্সটি অনুসরণ করে উপকৃত হতে পারে এবং পুষ্টি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে।
https://ncbelearning.fpmu.gov.bd/ লিংকটির মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন-এ এই ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মটিতে যাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলি তার বক্তব্যে পুষ্টি-সংবেদনশীল নীতি ও কর্মসূচির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে এফএও-এর প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন বলেন, অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে ইউএসএআইডি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত এফএও-এর মিটিং দ্য আন্ডারনিউট্রিশন প্রকল্পটি বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টি দূর করার জন্য একটি অনুকূল ও সক্ষম পরিবেশ গড়ে তুলতে এফপিএমইউসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলোর সক্ষমতা জোরদার করতে অবদান রেখে চলেছে।
খাদ্য সচিব বলেন, এফএও তাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে এবং বিশেষ করে ইউএসএআইডি এবং ইইউ দ্বারা সমর্থিত মিটিং দ্য আন্ডারনিউট্রিশন প্রকল্প দ্বারা বিগত ছয় বছরে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নীতিগত ফলাফল এসেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফপিএমইউ মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শহীদুজ্জামান ফারুকী।
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী অতিথিদের নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনাসহ, এফএও-এর মিটিং দ্য আন্ডারনিউট্রিশন প্রকল্পের দুইটি প্রকাশনা এবং সেই সঙ্গে নিউট্রিশন ই-লার্নিং প্লাটফর্মের শুভ উদ্বোধন করেন।
এনএইচবি/টিটি