রাজউক কর্মকর্তার ঘুষ দাবি, সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ
নকশা অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে একজন আবাসন ব্যবসায়ীর কাছে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অথরাউজড অফিসার-৭ (১ ও ২) মোহাম্মদ নুর আলম বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির বৈঠকে অভিযোগ নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তী বৈঠকে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের নিদের্শনা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বজলুল হক হারুন, মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন ও ফরিদা খানম এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি সূত্র জানায়, আবাসন ব্যবসায়ীর আনীত অভিযোগ নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত রাজউক চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তারা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন, সেখানে একজন সরকারী কর্মকর্তা ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। এই সাহস সে কোথা থেকে পায়? এ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ আগেও উঠেছে।'
'কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত আবেদনের সঙ্গে দেওয়া তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে রাজউকের ইঞ্জিনিয়ার নূর আলম সোহেল (ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল ডিভিশন) সহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।'
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটি সবসময়ই স্বোচ্ছার আছে। সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন। দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর রাজউক থেকে হোল্ডিং নম্বর ৫৯ ও ৫৯/১ সুভাষ বোস অ্যাভিনিউ, লক্ষ্মীবাজারে একটি দশতলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনুমোদন নেওয়া হয়। একই বছর ২ ডিসেম্বর নকশা অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত ফিস জমা-রসিদসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও নকশার কপি রাজউকে জমা দেওয়া হয়।
রাজউকের জোনের ৭ (১) ও ৭ (২) দায়িত্বপ্রাপ্ত অথরাইজড অফিসার ইঞ্জিনিয়ার মো. নুর আলম (ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল ডিভিশন) নকশা অনুমোদনের নথিটি গ্রহণ করেন। পরে তিনি বিভিন্নভাবে নকশাটি অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নথি-সম্পর্কিত খোঁজ নিতে রাজউক ভবনে গেলে নানান অজুহাতে নকশাটি অনুমোদনের জন্য ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন রাজউকের ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, রাজউক কর্মকর্তা নূর আলম ওই এলাকায় নির্মাণাধীন সকল ভবনেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করেন। তার সহকারীদের মাধ্যমে অফিসে যোগাযোগ ও ফায়সালা করার জন্য চাপ প্রয়োগ ও ভয়-ভীতি দেখান।
এ ছাড়া তিনি লক্ষ্মীবাজারের সুভাষ বোস অ্যাভিনিউ ও সূত্রাপুরের তনুগঞ্জ লেনের পৃথক দু’টি ১০তলা ভবনকে অবৈধ ভাবে ১২তলা করার সুযোগ দিয়েছেন। বিনিময়ে বড় অংকের টাকা নিয়েছে।
অন্যদিকে, লক্ষ্মীবাজার একজনের কাছ থেকে সম্মুখ ভাগের অবৈধ অংশ ভেঙ্গে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে আবারো পুনঃনির্মাণ করার সুযোগ প্রদান করেছেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে বৈঠকে দেশের সকল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসহ হোটেল সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) স্থাপনের বিধান এবং এসটিপি নির্মাণ সামগ্রীর উপর আমদানি শুল্ক কামানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনার জন্য বলা হয়।
এ ছাড়া পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প পরিচালনার জন্য পূর্বাচল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য সুপারিশ করা হয়।
এসএম/এমএমএ/