সংলাপে ড. ইফতেখারুজ্জামান
ব্যর্থতার দায় স্বীকারে সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ উপেক্ষা করে ঢালাওভাবে ব্যাপক বিতর্কিত নির্বাচনকে ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছি’-এরূপ অবাস্তব দাবি করা ও বিব্রতকর অস্বীকারের চর্চা পরিহার করতে হবে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, নিজেকে আয়নার মুখোমুখি করে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে দায় স্বীকারে সৎসাহসের পরিচয় দিতে হবে।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করে এ কথা বলেন সাবেক ব্যাংকার।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। মোট ৩৯ বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন মাত্র ১৯ জন।
সংলাপে অংশ নিয়ে ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রস্তাবনায় তিনি বলেছেন, এই সংলাপটি যেনো কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে একটি প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারাবাহিক গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদেরকে পর্যায়ক্রমে আরও ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত করে কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালনের জন্য স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদি কৌশল ও সুনির্দিষ্ট পথরেখা প্রণয়ন করা উচিত। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও জনআস্থা অর্জনে অন্যতম পরিমাপক হবে কমিশনের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সরকারি আনুগত্য ও প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে তার অবস্থান ও কর্মকাণ্ডে নিজেকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কতটুকু প্রমাণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকারি আনুগত্যমূলক মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান পরিহার করে রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের প্রস্তাব করুন এবং যথাযথ অধিপরামর্শমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে এমন প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে যেনো নির্বাচনকালীন সরকার, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচন করা-এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়ে সমঝোতা অর্জন সম্ভব হয়।
অন্যদের মতো ড. ইফতেখারুজ্জামানও মনে করেন, নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে না। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেহেতু আইনগতভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এ সকল প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত, সেজন্য কমিশনকেই সৎসাহসের সঙ্গে যথাযথভাবে তাঁদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আগ্রহী সকল দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অবাধে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন তিনি। বিগত নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও এমনকি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর কমিশনের অপসারণের যে আবেদন করা হয়েছিল, তার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে এ ধরনের পরিস্থিতি যেনো পুনরায় উদ্ভব না হয়, তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ছাড়াও সংলাপে অংশগ্রহণ করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, লিডারশিপ স্ট্রাডিজ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল; সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নিজেরা করি’র কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরাম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, গভর্নেন্স এন্ড রাইট সেন্টার প্রেসিডেন্ট ড. জহুরুল আলম, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অধ্যাপক শামীম রেজা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।
এ ছাড়াও সংলাপে ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, রাশেদা সুলতানা এমিলি ও আহসান হাবীব খান।
এসএম/এসআইএইচ