আমলাদের ব্যাপারে ইসিকে সতর্ক করলেন ড. ফরাস উদ্দিন
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারি আমলাদের একটা বড় ঢেউ আসবে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) তে সরকারি চাকরি থেকে অবসর যাওয়ার বয়স তিন বছর না হলে নির্বাচন করতে পারবে না। আমি যতটুকু জানি সরকারি কর্মকর্তাদের এ সম্পর্কে একটা বড় ধরনের ঢেউ আসবে। এটা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য। এজন্য আপনাদের (ইসি) সতর্কবাণী দিচ্ছি। যদি সইতে পারেন ভালো। আমলাদের একটা শক্তিশালী গ্রুপ নির্বাচনে দাঁড়াতে চায়। সেজন্য তারা এটা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করবে।’
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন সাবেক ব্যাংকার।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। মোট ৩৯ বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন মাত্র ১৯ জন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিলের পক্ষে নিজের মতামত তুলে ধরে ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। সারা পৃথিবীতে বিতর্কিত। এটা সম্বন্ধে সাবধান। আমি নিজে ভোট দিতে গিয়ে দেখেছি ইভিএম সহায়ক একজন লোক তিনি আমাকে বলেন আপনি জানেন না কীভাবে ভোট দিতে হয়? আমাকে বলে দিন কোন মার্কায় ভোট দেব। কাজেই যা হওয়ার তাই হয়। খুব জোরের সঙ্গে সুপারিশ করছি ইভিএম ব্যবহার না করাই ভালো। ভারতে উঠে যাচ্ছে, প্রায় সব দেশেই উঠে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত এটা (ইভিএম) টেকনিক্যালি সাউন্ড হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন যে ওখানে কোনো লোক থাকবে না। লোক থাকলেই গণ্ডগোল হবে, লোক থাকলে রাজনৈতিক লোক থাকবে, লোক থাকলে সরকারি দলের লোক থাকবে। এটা বন্ধ করতে হবে। এজন্য আপনার (সিইসি) ভরসা হলো মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন। অনেক কিছু করা যায়। নির্বাচনের আগের চার মাস এবং পরের দুই মাস এই ছয় মাস আইন শৃঙ্খলা আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেখানে নিয়োগ-বদলি এবং শৃঙ্খলা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে রাজনৈতিক সরকারের যে কদর্যতা ওটাকে নিরপেক্ষ করতে পারবেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শক্তভাবে সরকারের কাছে সাজেশন দেন। ২০২৩ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর ১১ তম সংসদ অকার্যকর হয়ে যাবে। বলতে হবে ১১তম সংসদ ৪ মাসের জন্য অকার্যকর হয়ে যাবে। ওই সময় তারা কোনো আইন পাশ, সংশোধন করতে পারবেন না। তারা (মন্ত্রী-এমপিরা) কোনো প্রটোকল নিয়ে কোথাও যেতে পারবেন না। তারা শুধু বেতন-ভাতা পাবেন। সরকারকে যদি এটা বোঝাতে পারেন আর যদি মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে কিন্তু আপনার উপর ফেরেস্তার মাধ্যমে অনেক আশীর্বাদ আসবে।’
নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার জন্য শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করে বলেন, ‘নির্বাচনের চার মাস আগে ক্ষমতাটা নির্বাচন কমিশনের কাছে নিয়ে নেবেন। অন্যয়ের শাস্তি দেওয়া সম্ভব এবং দেওয়া উচিত। ভারতবর্ষে অনেক করেছে। আপনারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।’
সংলাপে অংশগ্রহণ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান; লিডারশিপ স্ট্রাডিজ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল; সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নিজেরা করি’র কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরাম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, গভর্নেন্স এন্ড রাইট সেন্টার প্রেসিডেন্ট ড. জহুরুল আলম, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অধ্যাপক শামীম রেজা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।
এ ছাড়া চার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, রাশেদা সুলতানা এমিলি ও আহসান হাবীব খানও সংলাপে ছিলেন।
এসএম/এমএমএ/