জীবনের শেষ প্রান্তে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করব: সিইসি
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ইতিবাচক কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান নির্বাচন কশিনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমাদের হারানোর কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখন আমাদের কারও নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আসলে পাওয়ারও কিছু নেই। এখান থেকে যদি জীবনের শেষ প্রান্তে আমরা কিছু ইতিবাচক কিছু করতে পারি; আপনারা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেই পরামর্শের আলোকে এবং পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচনটাকে যদি অবাধ ও সুষ্ঠ করা যায় তাহলে সেটা একটা সফলতা হতে পারে।’
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সংলাপে একথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ সময় অন্য চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
মোট ৩৯ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সংলাপে অংশগ্রহণ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৯ জন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আজকের আয়োজন হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে আমরা তাদের মতামত, পরামর্শ, উপদেশ শুনব। আলোচনা যথেষ্ট ফলপ্রসু হয়েছে, সবাই কথা বলেছেন। আপনাদের পরামর্শগুলো আমরা নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করব। পর্যালোচনা করে প্রসিডিং আকারে তৈরি হবে। আর দেখব ভবিষতে কিভাবে এই পরামর্শগুলো কাজে লাগাতে পারি। তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো নিতে পারি না। পরামর্শগুলো নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা করে এখান থেকে যদি নতুন কিছু সংযোজন করতে পারি আমাদের কর্মপদ্ধিতে বা ওয়ার্কপ্ল্যান তাতে করে যদি নির্বাচনটা আরও অধিক স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য অবাধ হতে পারে, তাহলে আমাদের সাফলতা আসবে।’
বুদ্ধিজীবীদের আলোচনা ধরে সিইসি বলেন, ‘ভোটে সহিংসতা হলে ভোটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কোথাও সহিংসতা হলে ওখানে ভোট দিতে পারেন না। আপনারাও বলেছেন সহিংসতা যেন প্রতিরোধ করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের ভোটাররা যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটাধিকার প্রয়োগে বিভিন্ন বাধা আসতে পারে। কেউ বলেছেন পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। হ্যাঁ ওরকম হলেও নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হয় না। একটা অসম প্রতিযোগিতা হয়ে যায়।’
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রস্তাব আসায় সিইসি বলেন, ‘যারা ঘোষনা দিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না, কিন্তু তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কি করে আস্থায় আনা যায়। ভদ্রভাবে চা খাওয়ার কথা বলে তাদের কিছুটা পরিবর্তন করা যায় কি না সে বিষেয় আমাদের চেষ্টার কমতি থাকবে না।’
বিশিষ্টজনের ইসিকে সাহসি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা সত্য কথা আমরা যদি সাহস হারিয়ে ফেলি তাহলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। সাহসের পেছনে সততা থাকতে হবে, একাগ্রতা থাকতে হবে। আসলেই আমাদের হারানোর কিছু নাই। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমাদের কারো নেই। আসলে আমাদের পাওয়ারও কিছু নাই।’
সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচনটা যদি অবাধ ও সুষ্ঠ করা যায় তাহলে সেটা আমাদের সফলতা হতে পারে। শতভাগ সফলতা হয়তো হয় না, হবে না কখনো। কেউ কেউ বলেছেন যদি ৬০ শতাংশও গ্রহণযোগ্য হয় তাহলেও বড় সফলতা। বিগত কমিশনের কারণে অনেকে বলেছেন ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।’
ইভিএম নিয়ে টেনিক্যাল কমিটির পরামর্শ নেওয়ার দাবি উঠলে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম একটা যন্ত্র, এটার ভেতর কোনো অসুবিধা আছে কি না সেটা দেখা হবে। অনেকে বলেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ ইভিএম প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, কেন নিচ্ছে সেগুলো গবেষণা করে দেখা হবে। আমাদের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টা ভালোভাবে বুঝব।’
নির্বাচনে প্লাস্টিক পোস্টার ব্যানার ব্যবহার বন্ধের দাবি করেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের সেই জবাবে সিইসি বলেন, ‘লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যবহার করা হয় ব্যানার ফেস্টুনে। এগলো খুব যে প্রয়োজন তা না, তবে অর্থ ব্যয় হয় ভালো। আরও আধুনিক কি করা যায় সে বিষয়ে আমরা দেখব।’
নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বলেন, ‘অবশ্যিই ধর্ম যেন নির্বাচনে উপজীব্য হয়ে না ওঠে। আমরা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে বিষয়টা দেখবে। ভোটের আগে পরে ভোটারের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘আইনের কোনো অভাব নেই, কিন্তু এনফোর্সমেন্টের দিকটাতে ঘাটতি আছে। সেই জিনিস যেন আরও ভালোভাবে করতে পারি সেটাই চেষ্টা করব।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে লেবেল প্লেইং ফিল্ড এটা খুব কষ্ঠ সাধ্য একটা কাজ। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। তবে কমিশন এককভাভে এটা পারবেন না। সকলে এসে যদি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত না করেন তাহলে তাহলে ইসির পক্ষে এককভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। তবে আমরা আস্বস্থ করছি আমরা চেষ্টা করব। আপনারাও সহযোগিতা করবেন।’
২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন হাবিবুল আউয়াল, যার নেতৃত্বে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংলাপে অংশগ্রহণ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান; লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল; সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নিজেরা করি’র কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরাম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, গভর্নেন্স এন্ড রাইট সেন্টার প্রেসিডেন্ট ড. জহুরুল আলম, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, অধ্যাপক শামীম রেজা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।
এ ছাড়া চার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা এমিলি ও আহসান হাবীব খান সংলাপে ছিলেন।
এসএম/এমএমএ/