মেট্রোরেলের ভাড়া নিয়ে জটিলতা, কমিটি পুনর্গঠন
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইন-৬ এর ভাড়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যে ভাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সেটি সরকারের মনোপুত হয়নি। এ কারণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ভাড়া সংক্রান্ত কমিটিটি পুনর্গঠন করেছে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপকক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালককে প্রধান করে সাত সদস্যের এ কমিটি করা হয়েছে। নতুন এ কমিটি মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যে ভাড়ার প্রস্তাব করেছিল সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত ভাড়া জনবান্ধব নয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সর্বনিন্ম ৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি এমন সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ ভাড়া জনবান্ধন নয়, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত ভাড়া চূড়ান্ত করতে আরও যাচাই-বাছাই করা হবে। এজন্য ভাড়া সংক্রান্ত কমিটিটি গত ১৬ মার্চ পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত কমিটিতে বেসরকারি খাতের কাউকেই রাখা হয়নি। এমনকি টেকনিক্যাল বিষয়ক কাউকেও রাখা হয়নি। পুনর্গঠিত কমিটির সাতজনই সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। কমিটিতে ডিটিসিএ, বিআরটিএ, বিআরটিসি, ডিএমটিসিএল, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগের প্রতিনিধি রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, কমিটিতে বিভিন্ন সেক্টরের লোকজনকে রাখলে ভালো হতো। তাতে সবার মতমত জানা যেত।
একটি সূত্র জানায়, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে প্রস্তাবিত ভাড়া তৈরি করেছে তারা বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়া প্রস্তাব করেনি। এ কারণেই এখন পর্যন্ত ভাড়া চূড়ান্ত করা যায়নি। তাই ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত পূর্বের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটি প্রস্তাবিত ভাড়া মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত ভাড়া নির্ধারণ করবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ভাড়ার যে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল সেটি ভাড়া সংক্রান্ত আগের কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ করেছিল। তাতে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা, দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ২৮ টাকা, আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আট টাকা। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১২ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। তবে এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
কমিটি ও ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশেকে বলেন, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন কবে হয়েছে?
তিনি বলেন, এটা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। আমার কাছে এখনো কোনো চিঠি আসেনি।
তবে ভাড়া কত নির্ধারণ করা হয়েছে- সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এমকেডিএম-কে মেট্রোরেলের আইন ও বিধিধারা কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তারা কোনোভাবেই কিছু পারবেন না। আইন ও বিধির মধ্যে থেকে তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটিই আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বলেই দেওয়া হয়েছিল জনসাধারণের সক্ষমতা, মাথাপিছু আয়, আর্থিক সচ্ছলতা, পার্শ্ববর্তী দেশের ভাড়া পর্যালোচনা করে এবং মেট্রোরেল পরিচালনা করতে যে ব্যয় হবে সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার প্রস্তাব করতে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সে অনুযায়ী ভাড়ার প্রস্তাব করেছে। এখানে মনগড়া ও ইচ্ছামতো ভাড়ার প্রস্তাব করার কোনো সুযোগ নেই।
সূত্র জানায়, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সভায় যে হিসাব দিয়েছে তাতে প্রতি মাসে পরিচালন ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। দৈনিক ব্যয় হবে দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই কোটি টাকার বেশি যাবে শুধু জাইকার ঋণ ও সরকারের ব্যয় পরিশোধে। দৈনিক বৈদেশিক ঋণ বাবদ যাবে এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সরকারের ব্যয় জোগাতে ৪৯ লাখ টাকা লাগবে দিনে।
এসএন