ভিসা জটিলতায় পেছাল
ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেন সেবা, ভাড়া ন্যূনতম ২৭০৫ টাকা
দর্জিলিংয়ের হিমালয় কন্যা কাঞ্চন-জংঘা ও ঢাকার ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল
ভিসা জটিলতার কারণে মিতালি এক্সপ্রেসে সরাসরি ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেন সেবা চালুর সময় পেছাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চে এই রেলপথ চালুর সম্ভাব্য তারিখ ছিল। তবে দুই দেশের রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রস্তুত থাকলেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটকদের ভিসা সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স না আসায় ২৬ মার্চ চালু হচ্ছে না বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেন যোগাযোগ ঠিক কবে চালু হবে সেটা এখনই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভিসা সংক্রান্ত এই জটিলতা নিরসনে বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার (২১ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই সূত্রে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ে। এখন অপেক্ষা তাদের সিদ্ধান্তের।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তাদের আশা খুব শিগগিরই এই জটিলতার অবসান ঘটবে। আর দীর্ঘ দিন অপেক্ষায় থাকা মানুষের স্বপ্ন ডানা মেলবে অচিরেই। ভ্রমণ প্রিয় মানুষের দার্জিলিং ভ্রমণের সুযোগ মিলবে। নেপালের হিমালয় পাদদেশের ভারতীয় জেলা দার্জিলিং। এই দার্জিলিংয়ে একদিকে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতম পর্বতশ্রেণি অন্যদিকে বৈচিত্র্যময় পাহাড়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের এ জেলা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
ট্রেনটি চালু হলে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিমে যেমন বাংলাদেশী পর্যটকরা বড় সংখ্যায় অনায়াসে যেতে পারবেন, তেমনই সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষদেরও বাংলাদেশ আসতে সুবিধা হবে। তবে পর্যটন শিল্প এই ট্রেনটি নিয়ে আশাবাদী হলেও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় অথবা সিকিমের মানুষ কতটা এই ট্রেনে চেপে বাংলাদেশে আসতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কোনও ভিসা কেন্দ্র নেই, তাই দার্জিলিংয়ের পর্যটকদের এই ট্রেনে চাপতে হলে কলকাতায় যেয়ে ভিসা করে আসতে হবে।
কবে থেকে চালু হচ্ছে ঢাকা-দার্জিলিং রেলপথ তা জানতে আমরা কথা বলি বাংলাদেশ রেলওয়ের দুইজন কর্মকর্তার সঙ্গে। রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘ভিসা জটিলতার কারণে ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেন চালুর তারিখ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। জটিলতা নিরসনে উভয় দেশ আন্তরিক। এ নিয়ে কাজ চলছে। আশাকরি অচিরেই জটিলতা কেটে যাবে।’
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ ভারত ট্রেন পথে ভিসা ছাড়েনি। তারা যখনই ভিসা চালু করবে তখনই এটা শুরু হবে। তবে ২৬ মার্চ সম্ভাবত হচ্ছে না।’
দার্জিলিংয়ে বাংলাদেশের ভিসা সেন্টার থাকায় যে সমস্যা হবে সে ব্যাপারে এই কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপাতত আমাদের কোন করণীয় নেই। তাদের কলকাতাতে গিয়েই ভিসা করে আসতে হবে।’
ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেনের সময়সূচি
এরই মধ্যে ঢাকা-দার্জিলিং রেলপথের সূচি নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনটি দুই দিক থেকে সপ্তাহে দুই দিন করে চলাচল করবে।
মিতালী এক্সপ্রেস সপ্তাহের রবি ও বুধবার নিউজলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে; অন্য দিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছাড়বে সোম ও বৃহস্পতিবার। সূচি অনুযায়ী নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে ভারতের সময় বেলা ১১:৪৫ টায়। হলদিবাড়ি স্টেশন ছাড়বে ১২ টা ৫৫ মিনিট। চিলাহাটি স্টেশন ছাড়বে ১ টা ৫৫ মিনিটে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছাবে রাত ১০:৩০টায়।
এদিকে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছাড়বে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে। চিলাহাটি স্টেশন ছাড়বে ৫ টা ৪৫ টা। হলদিবাড়ি ছাড়বে ৬ টায়। নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে ভারত সময় ৭:১৫টায়।
ঢাকা-দার্জিলিং ট্রেনের ভাড়া কত
মিতালী এক্সপ্রেসে থাকবে ১০টি বগি। এর মধ্যে তিন ধরণের সেবা থাকবে। এসি বার্থ, এসি সিট ও এসি চেয়ার।
ভাড়াও নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসি বার্থ ৪৪ ডলার বা ৩ হাজার ৮২৮ টাকা সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আর ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা জনপ্রতি মোট ৪ হাজার ৯০৫ টাকা। এসি সিট ৩৩ ডলার বা অন্যান্য চার্জসহ ৩ হাজার ৮০৫ টাকা, এসি চেয়ার ২২ ডলার বা অন্যান্য চার্জসহ ২ হাজার ৭০৫ টাকা। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত অপ্রাপ্ত বয়স্ক যাত্রী টিকেটের ক্ষেত্রে অর্ধেক ভাড়া প্রযোজ্য হবে।
ঢাকা-দার্জিলিং রেলপথের দূরত্ব কত
এই রেল পথের দূরত্ব হচ্ছে ৫৩০ কিলোমিটার। এ মধ্যে ভারতের অংশে ৮৪ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশে অংশে ৪৪৬ কিলোমিটার। ট্রেনটির রুট হচ্ছে- নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) থেকে হলদিবাড়ি হয়ে সীমান্ত পেরবে ট্রেনটি। তারপর বাংলাদেশের চিলাহাটি, নীলফামারী, পার্বতীপুর, হিলি, নাটোর ঈশ্বরদী আর টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছবে।
তৃতীয় রেলপথ
এক সময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন রেলপথ চালু ছিল। পরে বিভিন্ন সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা-দার্জিলিং রেলপথ হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তৃতীয় রেলপথ। প্রথম রেলপথ ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রি এক্সপ্রেস চালু হয়। এরপর ২০২১ সালের ১ আগস্ট চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল দীর্ঘ ৫৬ বছর পর পুনরায় চালু হয়।
৫৫ বছর পর ঢাকা-দার্জিলিং রেলপথটি চালু হলে বাণিজ্যের পাশাপাশি দুই দেশের পর্যটনের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
এসএম/এপি/